উচ্চশিক্ষায় বাংলা বইয়ের অভাব - Dainikshiksha

উচ্চশিক্ষায় বাংলা বইয়ের অভাব

শরীফুল আলম সুমন ও মো. জহিরুল ইসলাম |

বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পড়ালেখা করে বাংলা মাধ্যমে। অথচ এ শিক্ষার্থীরাই যখন উচ্চশিক্ষায় আসে, তখন বাংলা বই নিয়ে চরম সংকটে পড়ে। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে ইংরেজি বইয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। এতে অনেকেই প্রথম দিকে ঠিকমতো তাল মেলাতে পারে না।

উচ্চশিক্ষায় গবেষণাই হচ্ছে মূল কাজ। কিন্তু বাংলা বইয়ের অভাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই গবেষণায় আগ্রহী হয় না। অনেকেই অন্যের ধার করা গবেষণাপত্র সামান্য পরিবর্তন করে নিজের বলে চালিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়ন করলেও স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর মধ্যেই গবেষণা সীমাবদ্ধ থাকছে। এতে গবেষণায় সামগ্রিক বাংলাদেশই উৎকর্ষ সাধন করতে পারছে না।

জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো কিছু বিষয়ে বাজারে যৎসামান্য বাংলা বইয়ের হদিস মেলে। তবে মেডিক্যাল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের পুরোপুরিই ইংরেজি বইয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। আর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নতুন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও ইংরেজি বইয়ের বিকল্প তৈরি হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ইলেকট্রনিক কৌশল বিষয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিম আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম বর্ষে গত কয়েক মাসে কোনো কোর্সই বাংলায় পড়ানো হয়নি। টপিক অনুযায়ী বাংলা বই তো পাওয়াই যায় না। বিশেষ করে আমাদের পদার্থ ও রসায়ন কোর্সে বাংলায় সমৃদ্ধ বই না পাওয়ায় বেশ সমস্যায়ই পড়তে হচ্ছে। তবে দু-একটি যা পাওয়া যায়, সেগুলো আক্ষরিক অনুবাদ। ভালো বোঝার জন্য প্রয়োজন ভাবানুবাদ।’

বুয়েটের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আর্কেটিকস, কেমিক্যাল, সিভিল, মেকানিক্যাল বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগেরই পাঠ্যসূচিসংক্রান্ত বাংলা বই খুঁজে না পাওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম শাহরিয়ার বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলায় বই খুবই অপ্রতুল। তবে প্যাথলজিসহ বেশ কিছু মেডিক্যাল টার্মের চর্চা যেহেতু সব সময়ই ইংরেজিতে হয়, তাই ইংরেজি বই থেকেই বিষয়গুলো আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি। আবার অনেক কিছু আছে, যেগুলোর বই বাংলায় থাকলে মনে হয় ভালো হতো। যদি আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বাংলায় কিছু বই লেখেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নয়ন আলহাস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০টি কোর্স শেষ করেছি। কিন্তু কখনোই বাংলা বই পাইনি। ফলে আমাদের অনেক সময়ই শিক্ষক, বড় ভাই, ইন্টারনেট ও গুগল অনুবাদের দারস্থ হতে হয়। বাংলা বই থাকলে আরো অনেক বেশি এগোতে পারতাম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা ইংরেজিতে পাঠদান করান। আর পাঠ্যসূচিসংক্রান্ত বইগুলোও ইংরেজিতে। আমরা লিখিও ইংরেজিতে। ফলে বাংলায় কিছু বই থাকলেও তা ধরা হয় না। আসলে বাংলায় যেভাবে বুঝি, মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি, ইংরেজিতে সেটা পারি না।’

অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী সোহান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলায় তেমন বই নেই বললেই চলে। তবে আমাদের যেহেতু ইংরেজিতে লেখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই বাংলা সেভাবে খোঁজাও হয় না। আবার বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয় থাকলেও সেটি ইংরেজিতে লিখতে হয়। ফলে বাংলায় পড়ে ইংরেজিতে লিখতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়।’

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিবিএ, এমবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস, সমুদ্রবিজ্ঞান, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইনিংসহ বেশ কিছু বিষয়ের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগের পুরনো কিছু বিষয়ে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লেখার সুযোগ আছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবই করতে হয় ইংরেজিতে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশই মাতৃভাষার চর্চা না করে এগোতে পারেনি। জার্মান, ফরাসি, জাপানি, চায়নিজ সবাই মাতৃভাষার ব্যবহার করেই উঠেছে। আমরা মাতৃভাষার জন্য অনেক কিছু করলেও বাংলা ভাষায় উচ্চমানের বই প্রণয়নে পিছিয়ে আছি। অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যাঁরা বাংলার জন্য দরদ দেখান; কিন্তু বাংলায় একটা ভালো বইও লেখেননি। ভালো বইগুলো যদি অনুবাদও করা যেত তবে কিছুটা কাজে লাগত। বাংলা একাডেমি একসময় অনুবাদের কাজটি করলেও তাও বন্ধ করে রেখেছে। ভালো বাংলা বইয়ের জন্য যুদ্ধ ঘোষণার মতো করে নামতে হবে। তবেই পরিবর্তন আসবে।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065748691558838