বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যার পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। বছরে ২৫ লাখ এসএসসি, ২০ লাখ এইচএসসি এবং ১২ লাখ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাশ করে বেরোচ্ছে। চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ মেলে পাঁচ-ছয় বছর। ফলে ১২–৫=৬০ লাখ শিক্ষিত বেকার প্রতি বছর থাকছেই। যা কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ। প্রতি বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০/১২ হাজার টাকা বেতনে ১৫/১৬ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে বলতে গেলে পেটে ভাতে কয়েক লাখ লোকের চাকরি হয়। সরকারি চাকরিতে বছরে ৫০ হাজার লোকও ঢুকতে পারে না। লাখ লাখ পদ খালি বা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও শূন্য থাকছে নানা জটিলতায়। বুধবার (২০ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে যদি ৪ কোটি পরিবার থেকে থাকে; প্রত্যেকটি পরিবারেই অন্তত দুই-তিন জন শিক্ষিত বেকার আছে। বিশেষ করে এইচএসসি বা স্নাতক পাস আছে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে এরা ঘুরে মরছে। অনেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে মুখ বেঁধে বিভিন্ন গার্মেন্টস বা ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করছে। একে কীভাবে বছরে ৭০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে বলা যায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা অন্তত ২০/২৫ হাজার শিক্ষার্থীর চাকরির বয়স শেষ। এখন বেকার। এমফিল বা নানা কোর্সে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘুরছে আশার মরীচিকার পিছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা নাইবা বললাম। শিক্ষিত বেকার ছেলেরা হয়তো ন্যূনতম বেতনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিল্ডে চাকরি করছে। সাইকেলে, রিকশায়, হেঁটে, টেম্পোতে অমানুষিক পরিশ্রম করে মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা আয় করছে। ছুটির দিনেও এরা কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠানে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, পিএফ, ইনক্রিমেন্ট কিছুই নাই।
কোন যুক্তিতে চাকরির বয়স দুই বছর বাড়ানো হলো? অথচ চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ল না! কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কার্যকর হলো না! দুটো মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স করে পাঁচ বছর ধরে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে, কোথাও জায়গা পাচ্ছে না। এ দুঃখ কাকে বলব?
পরিশেষে বলব, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এসব নিয়ে অনুমাননির্ভর পরিসংখ্যান দেবেন না। এর গভীরে অনেক চোখের জল, অনেক স্বপ্নের মৃত্যু এবং অনেক আশা-নিরাশার দোলাচলে আমরা প্রান্তিক জনেরা।
মোতাহার হোসেন হান্নান মাস্টার : উত্তর সাধার চর, শিবপুর, নরসিংদী।