নিজ সন্তানের নৈতিকতার বিষয়ে আমরা বেখেয়াল। অথচ তাদের জন্যে বাড়ি-গাড়ি, সম্পদ, ভোগ-বিলাসের সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। এতে একথা প্রমাণিত হয় আমাদের সন্তানরা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিজেদের দোষে; তার চেয়েও বেশি ধ্বংস হচ্ছে বাবা-মার সচেতনতার অভাবে। তাই পারিবারিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সম্প্রতি দুটি ঘটনা অভিভাবকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। প্রথমটি গত ৩১ জানুয়ারি ভারতের কলকাতা নিউ টাউনের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. পার্থ সারথী দাস ছাত্রদের বিশেষ স্টাইলে চুল না ছাঁটতে ও রং না দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি এতে ব্যর্থ হয়ে সেলুন কর্মীদের (নাপিত) দ্বারস্থ হন। তিনি ছাত্রদের বিশেষ স্টাইলে চুল না ছাঁটতে ও চুলে রং না করতে অনুরোধপত্র প্রদান করেন।
দ্বিতীয়টি- বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার ঘটনা। সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি উঠতি বয়সী ছেলেদের মাদকাসক্তি, ইভ টিজিং ও বখাটেপনা থেকে ফিরিয়ে আনতে বা প্রতিরোধ করতে নরসুন্দর বা নাপিত বা সেলুন কর্মীদের নিকট বিশেষ স্টাইলে চুল ছাঁটা ও চুলে রং দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার জারি করেন। এর আগে অবশ্য ওসি এ বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় ও সেলুন মালিক এবং তাদের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য ও নেতাদের সাথে বৈঠক করেন।
ঘটনা দুটি সচেতন মানুষের চোখে পড়লেও তেমন একটা আলোচনা হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো মতামতও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। তাতে ধারণা হয় যে, প্রধান শিক্ষক ও পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া এ বিষয়ে কারও দায় নেই।
বিশেষ স্টাইলে চুল ছাঁটা, চুলে রং করাসহ চাল-চলনে ছেলেদের ন্যায় মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। তারাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এরা নিজের জীবন, মা-বাবার জীবন ও দেশের ললাটে কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। সন্তানের বাবা-মা ও অভিভাবকদের হাতে এখনও সময় আছে, রাহুগ্রাস থেকে সন্তানকে বাঁচাতে হলে ড. পার্থ সারথী দাস ও আমির হোসেনের উদ্যোগকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানানো। তাদের এই উদ্যোগ সামজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: নকলা, শেরপুর