পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে নানা অভিযোগের পরও গত কয়েক বছরে খাতা দেখায় কড়াকড়ির পাশাপাশি মাত্র এক হাজার ৫৩৮ জন শিক্ষককে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। আর এমন শম্ভুক গতিতে প্রশিক্ষণ চলতে থাকলে শুধু মাধ্যমিকেরই ৬০ হাজার পরীক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে সময় লাগবে ২০ বছর।
এতোদিন পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার উপায় খুঁজছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশেষে অনলাইনে সব পরীক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) এটুআই প্রকল্পের উদ্যোগে রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে পাঁচটি বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়নের ওপর অনলাইনে প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হলো- বাংলা প্রথম পত্র, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং। পরবর্তীতে অন্যান্য বিষয়সমূহ এই কোর্সের আওতায় আনা হবে।
কোর্সের প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে গতকাল থেকেই মুক্তপাঠ নামক ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করে কোর্সে অংশগ্রহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন শিক্ষকরা। এই রেজিস্ট্রেশন ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে। ৩১ মার্চের পর পরবর্তী নতুন ধাপের ঘোষণা দেওয়া হবে। আর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকগণকে মূল্যায়নের ভিত্তিতে অনলাইন সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। আর সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী শিক্ষকগণ বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বিবেচিত হবেন।
জানা যায়, পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর যথাযথ উত্তরপত্র মূল্যায়ন নির্ভরযোগ্য ফলাফলের পূর্বশর্ত। তবে নয়টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শুধুমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬০ হাজার শিক্ষক পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় তিন লাখ শিক্ষককে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করছে। তাদের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে ফেস টু ফেস প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে গেলে শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে। আর দীর্ঘ সময়ের সঙ্গে বিপুল অর্থ খরচ হবে। আর বর্তমানে যে রিসোর্স পার্সন রয়েছে তারে দিয়ে সারা বছরে তিন হাজারের বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। সেই হিসেবে ৬০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে গেলে সময় লাগবে ২০ বছর। আর একজন শিক্ষকের প্রশিক্ষণের পেছনে ব্যয় হবে নয় হাজার টাকা। সে অনুসারে ৬০ হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণের পেছনে ব্যয় হবে ৫৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে এই অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিতে পরীক্ষক প্রতি ব্যয় হবে মাত্র ২৩০ টাকা। সেই হিসেবে ৬০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষন দিতে প্রয়োজন হবে মাত্র এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পাশাপাশি সময়ও বেঁচে যাবে।
জানা যায়, কোর্সটি সফলভাবে সম্পন্ন করলে একজন পরীক্ষক সৃজনশীল প্রশ্নের গঠন কাঠামো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা লাভ করবেন। নমুনা উত্তরের মাধ্যমে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কৌশল জানবেন। উত্তরপত্রে নির্ভরযোগ্য নম্বর প্রদানের অন্তরায় ও উত্তরনের উপায় সম্বন্ধে জানবেন।
একজন শিক্ষক তার সুবিধামতো সময়ে অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। একজন পরীক্ষক যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে সময় দেন তাহলে দুই সপ্তাহে কোর্স সম্পন্ন করতে পারবেন।