ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ও মিডিয়াভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপক বিস্মৃতি লাভ করেছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি গঠন, মানবসম্পদ তৈরি, নারী শিক্ষার প্রসার ও পেশাগত শিক্ষার প্রয়োজনে বাউবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম চালু করায় বাউবির শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। রোববার (১ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এখন তথ্য ও প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পন্ন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। তবে প্রযুক্তি ও ব্যবস্থপনায় স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে উপাচার্য ড. এম এ মাননানের নেতৃত্বে অনলাইন শিক্ষা প্রসারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে। আজ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সবকিছুই বাউবির শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োগ হচ্ছে।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ই-বুক, ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ওপেন বাংলা ওয়েব টিভি, ওপেন বাংলা ওয়েব রেডিও, বাউবি টিউব, বাউবি অ্যাপস ও ই-প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাধারা গড়ে তুলেছে।
এই ধারা বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বাউবি দুবাই, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য বাউবি সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিটিভি ও বেতারের মাধ্যমে পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি অনলাইনে বাউবির শত শত ইবুক, ইউটিউবে বিভিন্ন প্রোগ্রামের হাজার হাজার লেকচার আপলোড থাকায় শিক্ষার্থী ও আগ্রহী যে কেউ বাউবির ওয়েবসাইট থেকে বিনা মূল্যে সেসব ইবুক ও লেকচার ডাউনলোড করতে পারছে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে মোবাইল মাক্রো এসডি কার্ড, যাতে মোবাইলের মেমোরি কার্ডে লেকচার লোড করা থাকে। শিক্ষার্থীরা যে কোনো স্থানে বসে ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই মোবাইলের মাধ্যমে লেকচার দেখতে ও পড়তে পারবে। বাউবি চালু করেছে ইন্টারঅ্যাকটিভ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট স্থানে ক্লাস ও মতবিনিময় করতে পারে। রয়েছে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সুবিধা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একজন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হওয়ায় এখানে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় চালু করা হয়েছে ।
বাউবিতে চালু হতে যাচ্ছে যুগোপযোগী প্রোগ্রাম—মাস্টার্স অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, মাস্টার্স ইন সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুর্যাল লাইভলিহুড, মাস্টার্স ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোামা ইন ফার্মেসি, ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, ডিপ্লোমা ইন আলট্রা সাউন্ড। এছাড়া সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা কর্মস্থলে থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় বাউবির এসএসসি ও এইচএসসি নিশ-১ ও নিশ-২ শিক্ষা প্রোগ্রামের মাধ্যমে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি প্রেগ্রাম চালু করে বাউবি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রেখে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিডিরেন প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি সমৃদ্ধকরণে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে গঠন করেছে কোয়ালিটি এসুরেন্স সেল। রয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধ নিজস্ব মিডিয়া সেন্টার, যাতে আছে অত্যাধুনিক স্টুডিও, তথ্যপ্রযক্তি-সমৃদ্ধ ক্যামেরা ও এডিটিং প্যানেল। রয়েছে আইসিটিভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম। স্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র।
বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাউবির রয়েছে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, যা দেশের প্রয়োজন ও উন্নয়ন কর্মধারার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। গ্রামগঞ্জসহ বিভিন্ন পরিবেশে অবস্থানরত বেকার যুবক-যুবতীদের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার জন্য এসব বিষয়ে রেডিও, টিভিতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে এবং ইউটিউবে আপলোড করে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক এবং ২৬ হাজার শিক্ষকের শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে রজতজয়ন্তী উত্সব। বাউবির দূরশিক্ষণ কার্যক্রম ও তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা বিশ্বমানের পর্যায়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শিক্ষাক্ষেত্রে লাভ করেছে বিশেষ পরিচিতি। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি এবং ডিজিটাল শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষার গতিশীল কার্যক্রম অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
খ্যাতনামা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ বাউবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মাননানের সুদূরপ্রসারী চিন্তা, অক্লান্ত পরিশ্রম, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী বাউবির প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেনের ঐকান্তিক সহযোগিতায় বাউবি তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল শিক্ষা পৌঁছে দিয়ে সরকারের ডিজিটাল শিক্ষা বাস্তবায়নে অগ্রপথিক হিসেবে কাজ করছে। সরকারের এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে এবং এসডিজি বাস্তবায়নেও বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
লেখক : ড. মেজবাহ উদ্দিন তুহিন, গবেষক, আঞ্চলিক পরিচালক, বাউবি।