ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১ ও ১২ নভেম্বর শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে কিন্তু শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। খোলা রাখার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, উপকূলীয় ১৪ জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের মানুষ যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে পারেন এবং তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা দেয়া যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন আজ শনিবার দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন,‘ঘূণিঝড় মোকাবেলা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উপকূলীয় এলাকার প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজ এবং মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ বুলবুল পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূল দিয়ে সমতলে আঘাত হানবে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। উপকূলের ১৪টি জেলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব জেলার স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে আঘাত থেকে মানুষদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজকে ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছে। যেসব স্কুল-কলেজ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ঘূণিঝড় বুলবুলের কারণে সারাদেশে জেএসসি ও জেডিসির ৯ ও ১১ নভেম্বরের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত জেএসসির ৯ নভেম্বরের গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ১২ নভেম্বর ও জেডিসির গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ১৪ নভেম্বর এবং ১১ নভেম্বরের জেএসসির বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা ১৩ নভেম্বর এবং জেডিসির ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক।
অপরদিকে, আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষ এবং এলএলবির পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফয়জুল করিম শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়ে বলেন, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের বিষয়ে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ বুলবুল পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূল দিয়ে সমতলে আঘাত হানবে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। উপকূলের আটটি জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও চাঁদপুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সাগরে বুলবুলের বেগ আরও বেশি। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, আজ সন্ধ্যা নাগাদ যখন ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূলে আঘাত হানবে, সেই সময়টায় এসব অঞ্চলের নদ-নদীগুলো এবং সাগরে জোয়ার থাকবে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধির প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বেশি হবে। তিনি জানান, উপকূলের আটটি জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও চাঁদপুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
আরিফ হোসেন বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূলে আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দেশের মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে হয়ে যাবে। এর প্রভাবে কাল রোববার ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের সবশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পর্যটন ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বাপ্পী বলেন, ‘ঝড়টি সন্ধ্যায় আঘাত হানবে বলে শুনছি। এতে বড় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকায় আমরা বিপদে পড়ে যাব। কারণ গতকাল এখানে জোয়ার শুরু হয়েছিল বিকেল পাঁচটায়। আর পূর্ণ জোয়ার হয় রাত সাড়ে আটটায়। তাই সন্ধ্যায় আঘাত হানলে জোয়ার বেশি হয়ে বড় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর আর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।