উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে অষ্টধাতুর আংটি! - দৈনিকশিক্ষা

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে অষ্টধাতুর আংটি!

ভোলা প্রতিনিধি |

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৃষিত কুমার চৌধুরী বরাদ্দপ্রতি ঘুষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য তিনি আটজন শিক্ষক নেতাকে ব্যবহার করছেন। যাকে স্থানীয়রা নিন্দা করে বলছে অষ্টধাতু।

শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলায় ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে শেখ হাসিনার নামসংবলিত গল্পের বই দিতে বলা হয়েছে। সরকারিভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষের সৌন্দর্যবর্ধন, নিয়মিত মেরামতকাজ, ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গল্পের দুটি বই আনতে গেলে ৫০০ করে এক হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ বইগুলো বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা। শ্রেণিকক্ষের সৌন্দর্যবর্ধনের বিদ্যালয়প্রতি বরাদ্দ পাঁচ হাজার টাকা। এখান থেকে ৩০০ টাকা নিচ্ছেন কর্মকর্তা। নিয়মিত মেরামতে বরাদ্দ ১০ হাজার টাকা। এখান থেকে এক হাজার টাকা নিচ্ছেন। ক্ষুদ্র মেরামতে এক লাখ টাকা বরাদ্দ। এখান থেকে ১২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর স্লিপে বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা। এখান থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়প্রতি ঘুষ উঠছে ১৪ হাজার ৮০০ টাকা। যেসব প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ নেই, সেখান থেকে উঠছে দুই হাজার ৮০০ টাকা।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বই বিক্রি ও সরকারি বরাদ্দ থেকে মোট ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এসব টাকা নিয়েছেন দপ্তরের অফিস সহকারী আব্দুছ ছাত্তার ও অফিস সহকারী ছিদ্দিক।

গত শনিবার কলেজপাড়া আনছারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক এ কে এম মজিরুদ্দিন বলেন, ‘ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় ঢালাই করেছি।’ এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কাজ দেখাতে পারেননি।

মধ্য আবু বকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কাজ মোটামুটি হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমার কাছ থেকে অফিস ক্ষুদ্র মেরামত বরাদ্দ থেকে ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। স্লিপ ও প্রাক-প্রাথমিকের বরাদ্দ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অফিস যেমন ঘুষ নেয়, আমরাও তেমন সুযোগ পাই। ঘুষ দেওয়ার ফলে বিদ্যালয়ের কাজের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ পায়। প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হন। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়। আমাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন।’

এদিকে শিক্ষকরা জানান, উপজেলায় প্রাথমিকে তিনটি শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সরকারি, সদ্য জাতীয়করণকৃত ও গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক সমিতি। বদলি হয়ে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুছ ছালাম সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করেন। তিনি আট নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁরা হচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারি শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি, পূর্ব মাদ্রাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই। সমিতির সাধারণ সম্পাদক, চরফ্যাশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম ফলোয়ান। সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি, মধ্য আলীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহসিন। এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক, আনছারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মজিরুদ্দিন। গ্র্যাজুয়েশন শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি, দক্ষিণ জিন্নাগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ফ্যাশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই। এ ছাড়া আরো দুই শিক্ষক নেতা হচ্ছেন দক্ষিণ চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন সেন্টু এবং চর আইচা সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন।

শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন বিষয়ে অন্য কাউকে গুরুত্ব না দিয়ে এই আটজনের ওপর নির্ভর করেন কর্মকর্তা। সহকারী শিক্ষকরা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁরা এই ‘অষ্টধাতু’র কবল থেকে শিক্ষা দপ্তরকে মুক্ত করার দাবি জানান।

চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৃষিত কুমার চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। বরিশাল যাচ্ছি, এসে বিষয়টি দেখব।’

বিল প্রদানকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি তদারকি করতে পারিনি। উপজেলা প্রকৌশলী কাজের তদারকি করেন।’

উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘এসব বরাদ্দের টাকা প্রধান শিক্ষকের হিসাব নম্বরে ছাড় করা হয়। তাঁরা স্বাধীনমতো খরচ করতে পারেন। সব প্রতিষ্ঠান দেখা সম্ভাব হয় না।’

ভোলা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00388503074646