উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে একটি মাদরাসার অফিস সহকারীকে মারধর ও জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পরেছে। এ ঘটনা জানার পরপরই বুধবার (০৩ জুন) রাতেই পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা দেন বলে জানিয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবিদুর রহমান। পাশাপাশি আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবেও বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দরিচর-খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার ওই অফিস সহকারীর পরিবার ও স্বজনরা।
নির্যাতনের শিকার অফিস সহকারীর স্বজনরা জানান, সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিন দরিচর-খাজুরিয়াতেই থাকেন। তিনি সেখানে একটি দাখিল মাদরাসায় চাকরি করেন ও স্থানীয় সিকদার বাড়ি জামে মসজিদে ইমামতি করেন। এক শিক্ষার্থী নিয়মিত মাদরাসায় না আসায়, মাদ্রাসার কেরানি ওই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির জন্য নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সূত্র ধরে স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ওই শিক্ষার্থীর আত্মীয় ছত্তার সিকদার ক্ষুব্দ হন। পরে তারা কেরানিকে মারধর করেন। এরপর মঙ্গলবার (২ জুন) জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে শহিদুল ইসলামের নামে অভিযোগ দিয়ে বুধবার আবার ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেন ছত্তার সিকদার। পরে বুধবার বিকেলে চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা রাঢ়ী মাদ্রাসার অফিস সহকারীকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনেন। পরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ছত্তার সিকদার, স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শহীদ দেওয়ান ও চৌকিদারের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে শহিদুলের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে মাদ্রাসার ওই অফিস সহকারীর কাছে তারা টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে আপত্তি জানালে তাকে আটকে রাখেন। পরে স্বজনদের অনুরোধে ওই শহিদুলকে ছাড়া হলেও এরআগে তাকে মারধর এবং জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাদরাসার অফিস সহকারী শহিদুল চাচাতো ভাই ফিরোজ মাস্টার মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলি। তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তার ভাইয়ের তা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে জানান। এরপর তাকে আটকে রাখা হলে স্বজনদের পক্ষ থেকে টাকা দেওয়ার কথা ছত্তার সিকদারকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি নগদ টাকা না পেয়ে কোনো সুরাহা দিতে চাননি। পরে জুতার মালা পরিয়ে শহিদুলকে নির্যাতন করে। বিষয়টির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হয়। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে আলাউদ্দিনের স্ত্রী নাহিদা সুলতানা স্বামীর বরাত দিয়ে জানান, ২০১৯ সালে উপবৃত্তির তালিকা পাঠানোর সময় এক ছাত্রী মাদরাসায় না আসায় সেখানে নিজের একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ দিন নম্বরটি ব্যবহার না করায় এটি বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানি। এরই মধ্যে ওই ছাত্রীর এক বছরের উপবৃত্তির এক হাজার ৮০০ টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়। কিছুদিন আগে মোবাইল নম্বরটি সচল করে উপবৃত্তির টাকা দেখতে পান তিনি। ওই টাকা ছাত্রীর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই গত ৩০ মে তাকে মারধর করে সিম কার্ডটি নিয়ে যান ওই ছাত্রীর খালু সাবেক ইউপি মেম্বার ছত্তার সিকদার।