নানা চেষ্টা করেও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মের মধ্যে আনতে পারছে না সরকার। আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সার্বক্ষণিক উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ থাকা বাধ্যতামূলক ও অপরিহার্য। অথচ দেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এখন ২১টিতেই উপাচার্য নেই। কোষাধ্যক্ষ নেই ৪৯টিতে। আর সহ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নানা চেষ্টা করেও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছুতেই নিয়মের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। আইন ভঙ্গ করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বা বড় ব্যবসায়ী। এ কারণে আইন না-মানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে উল্টো আপস করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আকতার হোসেন বলেন, ইউজিসির পক্ষ থেকে যতটুকু করার আছে, তার সবটুকুই করা হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—এ তিন পদের ক্ষেত্রেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ প্রস্তাবিত তিনটি নামের মধ্যে আচার্য ও রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম না মেনে নিজেরাই একজন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে নিয়োগ দিয়ে মাসের পর মাস শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েন। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির সনদে মূল স্বাক্ষরকারী হলেন উপাচার্য। কিন্তু বৈধ উপাচার্য না থাকায় মূল সনদ পেতে শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয়। যদিও সাময়িক সনদ দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করা যায়। কিন্তু উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, আর্থিক বিষয়সহ অনেক ক্ষেত্রেই কাজ ঝুলে থাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ, ছাঁটাই, শিক্ষার মান, আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা আরেকটি বড় সমস্যা। কিন্তু আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয় না শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা ধরেই নেন, তাঁদের কেউ কিছু করতে পারবে না।
উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যের নিয়োগ করা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গণবিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় (ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মামলা চলছে), সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি (উপাচার্যের প্রস্তাব আছে), ইবাইস ইউনিভার্সিটি (ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব), রয়েল ইউনিভার্সিটি (উপাচার্য নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে), বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (উপাচার্য নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে), কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি।
উপাচার্য না থাকা আরও বিশ্ববিদ্যালয়
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই যাদের
আচার্যের নিয়োগ করা সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, সেগুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বগুড়ার পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জামালপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, নারায়ণগঞ্জের রণদাপ্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, টাইমস ইউনিভার্সিটি।
জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতো পদ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বেশি দিন চলতে পারে না। এটা আইনেরও পরিপন্থী। এ জন্য দ্রুত এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি আছে সরকারেরও।
সূত্র: প্রথম আলো