পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সততা ও নৈতিকতার সাথে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভিসিদের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়েও খোলাখুলি কথা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে। এ সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতির নেতারাও ছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র মতে, বৈঠকে দীপু মনি উপাচার্যদের বলেছেন, ‘ভিসিদের কেউ কেউ তাদের তাঁর অবস্থানের অপব্যবহার করছেন, অসদাচরণ করছেন। ভিসিদের নিয়ে আমরা যা শুনি তার সবই কি পত্র-পত্রিকার তৈরি? কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ভিসিরা অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু আইন মেনে না চললে এমন ভিসির দরকার নাই।’
এ সময় ভিসিদের সততা ও নৈতিকতার সাথে কাজ করার অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে ভিসিদের আরো সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
জানা যায়, দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। এসময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্যদের আলোচনা পর্ব শুরু হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। তাঁদের মধ্যে শেষ বত্তৃদ্ধতা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। বৈঠকটি শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা পর মুলতবি করা হয়। পরে আবার উপাচার্যদের নিয়ে বসার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকের সমাপনী বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসির তৈরি অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা প্রসঙ্গে একজন ভিসির বক্তব্যের রেশ ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘ভিসিদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অনেক ভালো ভালো কথা হয়েছে। এই একজন বললেন যে ভিসি হিসেবে তিনি লজ্জা পান। ভিসিদের নিয়ে যেসব অপ্রীতিকর কথা হয়েছে সেসব কি পত্রিকার তৈরি?’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি মানদণ্ড রাখতে হবে। এ জন্যই অভিন্ন নীতিমালা করা হচ্ছে। এটাতে সর্বনিম্ন যোগ্যতা বলে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি এর চেয়ে বেশি রাখতে চান সেটা রাখতে পারবেন। বিদেশে আমাদের অনেক মেধাবী সন্তান আছে, যারা বিদেশে শিক্ষকতা করছে। তাদেরও শিক্ষক হিসেবে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সভা : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের নীতিমালা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দীপু মনি বলেছেন, ‘একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা একেক রকম। এ জন্য আমরা একটি কাঠামো তৈরি করছি। কাজটা মূলত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এই কাঠামো নির্দেশ নয়, নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। একে ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে ধরে সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নীতিমালা তৈরি করবে।’