উপাচার্যরা আজ ডুবেছে পাপাচার্যে, ছাত্রলীগ গুণ্ডামিতে - দৈনিকশিক্ষা

উপাচার্যরা আজ ডুবেছে পাপাচার্যে, ছাত্রলীগ গুণ্ডামিতে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মঙ্গলবার অফিসে কাজ করতে করতে যখন টিভিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপিকা ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তার অপসারণ দাবিতে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের নির্লজ্জ হামলার ঘটনার খবর দেখছিলাম, তখন মন বিষাদে ভরে গেছে। সংঘর্ষের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলে দুর্ভোগের মুখে অনেক ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। অন্যদিকে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। ছাত্রীরা হলের তালা ভেঙে ছাত্রীদের আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে এ দেশের সব অগণতান্ত্রিক, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, অপশাসন ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ প্রতিবাদের সূতিকাগার। দেশের রাজনীতি মরে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের বিদ্রোহের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়নি। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর মহান ছয় দফা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণময় গণঅভ্যুত্থানের কিংবদন্তিগাথা ’৬৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ও ছাত্ররাজনীতির হাত ধরেই নির্মিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের তারুণ্যের শক্তিকে সংগঠিত করে গণজাগরণ ঘটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাতে ছাত্রসমাজ ও ছাত্রনেতারা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্ররাজনীতির সেই ঐতিহ্যের গৌরব বহু আগেই ধূসর হয়ে গেছে। ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসের ঐতিহ্য বহু আগেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছে। একটা অসুস্থ রাজনীতি ছাত্ররাজনীতিকে ক্রমশ রাক্ষসের মতো গিলে খেয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, একসময় ছাত্ররাজনীতি জাতির দিকনির্দেশনা ও স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিত। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি জাতিকে আলোকিত বীর নেতৃত্ব উপহার দিত। সেই পথ বেশ আগেই রুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন আর ছাত্ররাজনীতি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো নেতৃত্ব উপহার দিতে পারে না। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতা-কর্মীদের কাছেই নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, দেশের মানুষের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন জ্ঞানের আলোর বাতিঘর। একেকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন নির্মোহ চিত্তের মুক্তচিন্তা ও চেতনার লালন ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। নেতৃত্ব, দক্ষতা ও পান্ডিত্যের মাধুর্যে মানুষের কাছেও তারা ছিলেন শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত।

দলকানা, দলদাস, ক্ষমতালোভী শিক্ষকদের একটা বড় অংশ ছাত্ররাজনীতির কর্মীদের চেয়েও আজ বড় দলবাজ হতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে যেমন ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন, তেমনি জ্ঞানের আঁধার বা বাতিঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের ক্ষমতার লোভে অন্ধ কুৎসিত চেহারায় জাতির সামনে আবির্ভূত হয়েছেন। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া পুলিশ প্রবেশ করতে পারত না। একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু ও ছাত্ররাজনীতি এবং শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতির অবাধ চর্চার নিরাপত্তা দিতেন। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের যে ঐতিহাসিক আত্মার বন্ধন, পিতা-পুত্রের সম্পর্ক সেই সুতোটি বহু আগে কুৎসিত রাজনীতির আগ্রাসনে ছিঁড়ে গেছে।

জাহাঙ্গীরনগরের যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে তারা উপাচার্যের অপাসারণ দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলনরত। উপাচার্য ফারজানা ইসলাম চলমান এই আন্দোলন নিরসনে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি তাদের অভিভাবকত্বের মর্যাদা রক্ষায়ও দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাই ছাত্রলীগের হামলার পর যেখানে শিক্ষক ও ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন, শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, তখন তিনি বিকারগ্রস্ত উন্মাদের মতো সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, আজকের এই দিন তার জীবনের এক আনন্দের দিন। তিনি হামলাকারী ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করেননি, বলেছেন, তারা গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা যখন নির্লজ্জ বেহায়া হয়ে পড়েন, তখন সেই ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকদের নিরাপত্তা যেমন থাকতে পারে না, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশও থাকতে পারে না, তেমনি সেই বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের মন্দিরে পরিণত হতে পারে না। জাবি উপাচার্য গণঅভ্যুত্থানের সংজ্ঞা বদলে দম্ভ করেছেন। গণঅভ্যুত্থান হয় শাসকের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে যেটি হচ্ছে সেটি ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন। তার পক্ষে যেটি হয়েছে সেটি সন্ত্রাস। নির্লজ্জ কলঙ্ক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছে উন্নয়ন বরাদ্দের কমিশন চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠন থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। শাস্তির খড়্গ নেমে এসেছে। আমরা মনে করি, এমন অপরাধের জন্য তাদের আইনের আওতায় নেওয়া উচিত। একই সময়ে বহুল বিতর্কিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের কোটি টাকার ঈদ বোনাস দানের অভিযোগও সারা দেশে ছড়িয়েছে। মানুষকে ব্যথিত করেছে। কিন্তু এমন কলঙ্কজনক অভিযোগের পর তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণ না করা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে দলবাজির রাজনীতিতে নিমজ্জিত হবেন, ক্ষমতালোভী উপাচার্য থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন। ছাত্ররা দেশের গরিব জনগণের টাকায় উচ্চশিক্ষা লাভ করবেন, অথচ গণমানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ না করে গুণ্ডামি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিতে নিমজ্জিত হবেন আর রাষ্ট্র নির্বাক বসে থাকবে এটি হতে পারে না। দেশের এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যার দুয়েকজন উপাচার্য ছাড়া কেউ বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিযোগ হচ্ছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগ থেকে ছাত্র ভর্তিতে অনিয়ম ও নীতিহীন পথ গ্রহণ করেছেন। জাতির মেধাবী সন্তানরা ছিটকে পড়ে তাদের দলবাজির দারিদ্র্য মানসিক নীতির কারণে। তাদের ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদাবোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের কারণে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় তার অতীতের গৌরব হারাতে বসেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একসময় উপাচার্য শব্দটি যেখানে দেশের ছাত্রসমাজ থেকে সাধারণ মানুষের মনে দেবতার আসন নিয়ে গভীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছে, সেখানে আজ সোশ্যাল মিডিয়া বলছে, তারা পাপাচার্যে নিমজ্জিত হয়েছেন। আজ তারা উপাচার্য নন, পাপাচার্য। আর যে ছাত্রলীগ তার জন্মলগ্ন থেকে বাঙালি জাতির মহত্তম নেতা আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্লোভ আদর্শের পথ অবলম্বন করে গণতান্ত্রিক চেতনায় গভীর দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আত্মত্যাগের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, সেই ছাত্রলীগ আজ কমিশন বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী অবস্থানে অবতীর্ণ হয়েছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে বিতর্কিত করছেন, তাদের ক্ষমতার মেয়াদ বেড়ে যাচ্ছে। মাঝখানে কলঙ্কিত হচ্ছে ছাত্রলীগ। উপাচার্যরা যেমন পাপাচারে নিমজ্জিত হচ্ছেন, তেমনি ছাত্রলীগ আজ তার ইতিহাসের সব বর্ণাঢ্য গৌরব ও ঐতিহ্যের মুকুট ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে গুণ্ডামিতে ডুবে যাচ্ছে।

রাজশাহী পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষকে পুকুরের জলে ডুবিয়ে ছাত্রলীগ উল্লাস করে গুণ্ডামির নজির স্থাপন করেছে। এই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়েই নিয়মতান্ত্রিক ধারায় যে ফিরিয়ে আনা যাবে না, সেটি এর মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন করে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে। মাঝখানে অনেকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে মতামত তুলেছিলেন। ছাত্ররাজনীতির কলঙ্কিত ঘটনাপ্রবাহে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটলেও মন বেদনায় বিধুর হলেও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে আমি কখনো নই। লেজুড়বৃত্তি ও বাণিজ্যিকীকরণের পাপাচার থেকে মুক্ত করে ছাত্ররাজনীতিকে তার আদর্শের ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এবং সারা দেশে প্রতিযোগিতামূলক সুস্থধারার সৃজনশীলতার দুয়ার খুলে দিতে হবে। জাতির জীবনে যখন মহাদুর্যোগ নেমে আসে, তখন এ দেশের জনগণের সব গণতান্ত্রিক আশা-ভরসার স্থল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রসমাজ। গভীর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের ঐতিহ্যের পথেই ছাত্ররাজনীতিকে ফিরিয়ে আনার দায় সব মহলকেই অভিন্ন অবস্থান থেকে নিতে হবে। একসময় একজন ছাত্রনেতার প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধা ও সম্মান ছিল, আজকের জাতীয় রাজনীতিতে বিচরণ করা অনেক মন্ত্রী-এমপির প্রতি সেই শ্রদ্ধা নেই কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষকের যে মর্যাদা ছিল আজ ভিসির সে মর্যাদা নেই কেন? তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে। একসময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অগ্নিকন্যা খ্যাতি নিয়ে ফৌজি শাসক আইয়ুবের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মতিয়া চৌধুরীরা রাজনীতিকে আলোকিত করে উঠে আসতেন। এককালে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করে লৌহমানব খ্যাত সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটিয়ে গোটা বাংলার ছাত্রসমাজ ও গণমানুষের মহাপ্রলয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে তোফায়েল আহমেদরা ইতিহাস সৃষ্টি করে রাজনীতির আলোকিত সন্তান হিসেবে বেরিয়ে আসতেন। আজ সেই রাজনীতির পথ কেন অবরুদ্ধ? কেন ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কিত? কেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ তথা বাংলাদেশের ইতিহাসের পরিপূরক ছাত্রলীগের ইমেজ গু-ামিতে নিমজ্জিত? তাদের অভিভাবকদের এটি মূল্যায়ন করার সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উপাচার্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর যুগের পর যুগ কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে হাঁটেননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাতিঘর হতে কখনো দেখা যায়নি, সেই তারাই ঢাকার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন। গণমাধ্যমে সেই ভয়ঙ্কর খবর উঠে এলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।

কিছুদিন আগে অনুজপ্রতিম অধ্যাপক জাকির হোসেন চঞ্চল আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। জাকির হোসেন চঞ্চল এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই মেধাবী ছাত্র বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি মহাদুর্দিনে রাজপথের সাহসী মিছিলের কর্মী ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পেশাদারিত্বের জায়গায় দলবাজিকে প্রশ্রয় দেননি। একজন সাদা মনের সৎ মানুষ হিসেবে তার একটা নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার নিঃশর্ত আনুগত্য থাকলেও তার কাছে শিক্ষকের মর্যাদাই বড়। তিনি টেলিফোন করে আমাকে বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বঙ্গবন্ধুর ওপর স্মারক বক্তৃতা আয়োজনের। পাহাড়ঘেরা ওই মনোরম বিশ্ববিদ্যালয় একসময় স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের ভয়ঙ্কর ত্রাসের অভয়ারণ্য ছিল। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে তারা কাফনের টুকরা পর্যন্ত পাঠিয়েছিল। ’৯১ সালে চট্টগ্রামে রিপোর্ট করতে গিয়ে আমি অধ্যাপক আবদুল মান্নানের পাহাড়ের ওপরে ছোট্ট বাড়িতে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়ে সেই আলামত নিয়ে এসেছিলাম। প্রগতিশীল সব ছাত্রসংগঠন সম্মিলিতভাবে চাকসু নির্বাচনে নাজিমুদ্দিনকে ভিপি ও আজিমুদ্দিনকে জিএস নির্বাচিত করে শিবিরের পতন ঘটিয়েছিল। চাকসু ভিপি নাজিমুদ্দিন ষাটোর্ধ্ব হয়ে গেছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিবিরমুক্ত হলেও ছাত্রসমাজ আজও চাকসু নির্বাচনের অধিকার ভোগ করতে পারেনি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে বা প্রতিবাদী ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র কিনা এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

যাক, যে কথা বলছিলাম, জাকির হোসেন চঞ্চলকে টেলিফোনে জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। রাজনীতিতে বিচক্ষণ তোফায়েল আহমেদ একক স্মারক বক্তৃতার প্রস্তাব পেয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর মতো মহানায়কের জীবন ও দর্শন তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে আপনার যাওয়া উচিত। তিনি দুই দিন সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এই দুই দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নিজেরা সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তোফায়েল আহমেদ তো রাজি হননি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও আর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেনি। মাঝখানে একটি শুভ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি করার অধিকার, দলবাজি করার ক্ষমতা আর দেওয়া যায় কিনা, সেটি এখন দায়িত্বশীলদের উপলব্ধি করতে হবে। উপাচার্যের নামে পাপাচার্য আর ছাত্রলীগের নামে গুণ্ডাবাহিনী বহাল রাখবেন নাকি সংশোধন করবেন, সেটি মূল্যায়ন করতে হবে। সব শিক্ষক যেমন আদর্শহীন নন, লোভী ও ব্যক্তিত্বহীন নন, আত্মমর্যাদাহীন নন, তেমনি সব ছাত্রলীগ কর্মীই চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী নন। অধমদের বাদ দিয়ে উত্তমদের বেছে নেওয়ার দায়িত্ব দায়িত্বশীলদের। আমরা আশা করব, দায়িত্বশীলরা উত্তম পথটিই গ্রহণ করবেন। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করুন। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবারে সংঘটিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস ও তার নেপথ্যে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য এখনই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।

পীর হাবিবুর রহমান : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00382399559021