উবারের শেয়ারহোল্ডাররা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন যে একদিন তাদের বিনিয়োগের ফল তারা পাবেন। কিন্তু কোম্পানির সর্বশেষ রিপোর্ট দেখলে বোঝা যাবে যে তাদের অপেক্ষা আসলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। উবার তার কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে, আনছে বৈচিত্র্য। সূত্র বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারে রাজস্ব বেড়েছে বছরের শুরুর প্রথম তিন মাসের তুলনায় যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। তারপরেও উবারের নিট লোকসান ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় বেশি।
বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয় কিভাবে দেখছে?
প্রযুক্তি সবার জন্য সহজলভ্য
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বাজারে আছে প্রায় দশ বছর ধরে এবং উবারের হোম ডেলিভারি সার্ভিস এর গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়েছে।
কোম্পানির যে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সাথে সেবাদাতার সরাসরি সংযোগ ঘটায়, সেটি ছিল এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সুবিধা, বলছেন অ্যাডাম লেসিনস্কি।
তিনি ‘ওয়াইল্ড রাইড: ইনসাইড উবার'স কোয়েস্ট ফর ওয়ার্ল্ড ডমিনেশন' গ্রন্থের লেখক। তিনি বলেন, সময়ের সাথে প্রযুক্তিও সবার কাছে সহজলভ্য হয়েছে এবং এর মধ্যে আছে ট্যাক্সি কোম্পানি। ফলে উবারের সুবিধা কমেছে।
তার মতে উবারের শক্তি হলো সেবাগ্রহীতার কাছ পৌঁছানো ও সহজ ব্যবহার সুবিধা।
কিন্তু এখানে একটি দুর্বলতাও আছে।
আর সেটি হলো যে পদ্ধতি বা ফর্মুলা তারা ব্যবহার করছে।
অ্যাডাম লেসিনস্কি বলছেন এসব কোম্পানির স্থিতির স্বার্থে এ ফর্মুলা বন্ধ করা উচিত।
যদিও সেটি কোম্পানিগুলোর জন্য নেতিবাচক হতে পারে।
"তারা যদি লাভ করতে পারে তাহলে তারা কার্যক্রম বিস্তৃত করার খরচের কাছাকাছি আসতে পারে। তারা এখন খরচ কমাতে চাইছে কিন্তু ব্যবসাটার উন্নয়ন সত্যিই কঠিন"।
"দীর্ঘমেয়াদে তারা বিস্মিত হবে আমি এমনটাই দেখছি"।
শ্রম অসন্তোষ
বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে উবারকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
বিশেষ করে চালকদের বেতন দেয়ার ইস্যুতে।
এখন তারা যদি শ্রমখাতে ব্যয়কে যোগ করে তাহলে তাদের লাভ করার সুযোগ আরও কমে আসবে।
অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পিটার মরিচি বলছেন, এসব বিষয় উবারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বেশি সুযোগ করে দিয়েছে।
"চালক ও ভোক্তাদের মধ্যে সবসময় একটা বিষয় কাজ করে যে, বাড়তি সুবিধা নিয়ে কে অফার দিচ্ছে। এটিই মার্কেট শেয়ারে প্রভাব ফেলে"।
তিনি মনে করেন দীর্ঘমেয়াদি এই মার্কেট থেকে অর্থ আয় করা কঠিন।
উবার এখন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ছে ইউরোপেও।
উবারের আরেকটি মাথাব্যথার বিষয় হলো উবার ইটস'সহ এর লোকসানি উদ্যোগগুলো।
ফুড ডেলিভারি সার্ভিস থেকে রাজস্বের ১৭ ভাগ পায় উবার যা তৃতীয় কোয়ার্টারে ৬৪ভাগ বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
আমাজন মডেল
প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানি হিসেবে লাভের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, বলছিলেন উবারের প্রধান নির্বাহী।
"আমরা জানি লাভের প্রত্যাশা ছিলো এবং আমরা সেটি ২০২১ সাল নাগাদ আনবো আশা করি"।
কিন্তু তার এ বক্তব্যে অনেকেই ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন, কারণ উবারের মতো অন্য কোম্পানিগুলোও ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করছে।
এসব ক্ষেত্রে আমাজন বড় একটি উদাহরণ।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আমাজন ২০০১ সালে এসেও লাভ করতে পারেনি।
তবে এর লোকসানের কারণ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ।
কিন্তু উবারের ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন হলো, উবার কি বিশ্বস্ত গ্রাহক তৈরি করতে পেরেছে? আর এ মডেলটি কি লাভ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ?
মরিচি ও লেসিনস্কি দুজনেই বলছেন, এ ধরণের আরও কোম্পানি সামনে আসবে এবং তারা সবাই একই ধরণের সেবা অফার করবে।
"আমি জানিনা কখন ও কিভাবে এটি হবে। তবে আমি নিশ্চিত এটিই ভবিষ্যৎ"।