পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা হচ্ছে। সবাই কথা বলছে। আমরাও কথা বলছি। সাংবাদিকরাও লিখছে; কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর কারণ পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খল অবস্থা। এ বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে প্রথমেই প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা। সেই আন্তরিকতায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেশে বিদ্যমান যে আইন রয়েছে সেটা যথেষ্ট ভালো আইন নয়। যে আইনটি রয়েছে, সেটা প্রয়োগের দুটি কর্তৃপক্ষ রয়েছে। একটি হলো সড়ক বিভাগ। আরেকটি পুলিশ প্রশাসন। দুটি কর্তৃপক্ষই আইনের প্রয়োজনীয় প্রয়োগ করতে পারেনি।
পৃথিবীর কোনো দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানোর সুযোগ নেই। যদি কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায়, সেটা ফৌজদারি অপরাধ। পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনে সেটা নেই। কাজেই পুলিশ ধরলেও সামান্য জরিমানা করে বা উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়। পাশাপাশি এই দীর্ঘদিনে সড়ক পরিবহন খাতে লাগামহীন দুর্নীতি হচ্ছে। যার ফলে মালিক, শ্রমিক ও সুবিধাভোগীরা মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে আইনটিও সংশোধন হয় না। তারা আইন সংশোধন করতে দেন না।
গত কয়েক দিন রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে, এসব দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ধীরে ধীরে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সিন্ডিকেট না ভাঙলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কিছু আন্দোলন সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু যেসব কারণে দেশের সব মানুষ ক্ষতির শিকার হতে পারে, সেসব আন্দোলন সহজে দমানো যায় না। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল রয়েছে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও রয়েছেন ওই কাউন্সিলের সদস্য। সুবিধাভোগী ওই সিন্ডিকেটের কারণে সেই কাউন্সিলও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পুরো পরিবহন খাতে একটি শক্তিশালী দুষ্ট চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রকে কঠোর হাতে দমন করা না গেলে সড়কের নিরাপত্তা বিধান সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা, আইনের সুষ্ঠু ও কঠোর প্রয়োগ।
লেখক: কলামিস্ট ও জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য
সূত্র: সমকাল