আবরার ফাহাদ হত্যার প্রেক্ষাপটে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেয়ার শপথ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। শপথে তারা বলেছেন, বুয়েটের আঙিনায় আর যেন নিষ্পাপ কোন প্রাণ ঝরে না যায়, আর কোন নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়, সেটা সবাই মিলে নিশ্চিত করতে হবে। গত বুধবার শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষকও অংশ নেন। সোমবার (২১ অক্টোবর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, সকল প্রকার অন্যায়, সন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের এ শপথ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। কেননা এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই সন্ত্রাস, মারামারি, চাঁদাবাজি, গুণ্ডামি, গেস্ট রুম কালচার, র্যাগিং, টর্চার সেল এখন চরম সত্য। মেধাবীদের কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমেই ভয় আর বিভীষিকার এক নাম হয়ে উঠছে। যার দরুণ ছাত্ররা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় অধিক আগ্রহী হচ্ছে এবং প্রতিবছর মেধাবীদের বিরাট একটা অংশ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
অবশ্য এ অপসংস্কৃতি একদিনে তৈরি হয়নি আর সমাধানের পথটাও খুব সোজা নয়। ছাত্রসংগঠনগুলো কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তারা মূলত ব্যবহৃত হয় টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, আধিপত্য বিস্তার, দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন স্বার্থসিদ্ধির কাজে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিশ্বজিৎ হত্যার মতো নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখেছি। আর অস্ত্রসহ ছাত্রনেতাদের শোডাউন তো ক্যাম্পাস এবং রাজপথের নৈমিত্তিক ঘটনা। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষক রাজনীতির নোংরা একটা চক্র যারা ছাত্রদের ব্যবহার করছে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি করতে; ভিসি প্রোভিসি হওয়ার সিঁড়ি হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই বিরোধী দলের ছাত্রসংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো নেই বা থাকলেও প্রকাশ্য অস্তিত্ব নেই। জাতীয় নির্বাচনের পরের দিন পরাজিত রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা হল এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবে এ যেন এক অলিখিত নিয়ম। প্রশাসনের দলীয়করণ প্রত্যেক সরকারেরই অন্যতম নৈমিত্তিক কাজ, আর তাদের ইন্ধনেই সন্ত্রাস করে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি আমাদের শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করে ফেলছে। শিক্ষার্থীদের অধিকারের আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলোকে পাওয়া যায় না। কিন্তু আন্দোলন দমাতে তারা সক্রিয়তার পরিচয় দেয়।
সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ার প্রতিশ্রুতি আমরা উপরমহল থেকে বহুবার শুনেছি, কিন্তু সন্ত্রাসের ইন্ধন বন্ধ হয়নি। শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে হল থেকে দল থেকে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে। এ ব্যাপারে জনমত গঠন এবং তীব্রভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আর কোন আবরারের লাশ হয়ে ফিরে যাওয়া দেখতে চাই না।
সন্ত্রাস কারো কাম্য নয়, একে সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে থেকে নির্মূল করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস থাকলে তা যেমন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে বিপর্যস্ত করে তেমনি মানুষ গড়ার আঙিনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা চাই, এ ব্যাপারে দেশের সব মহলের শুভচিন্তার উদয় হোক। বুয়েটের মতোই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধ্বনিত হোক- সন্ত্রাস-সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার।