পাঠদানের অনুমতি পেয়ে চলতি বছরই এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে কলেজটি। উপজেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে জেনারেল শাখায় ৬৯ দশমিক ৫২ শতাংশ পাস নিয়ে। তাই কলেজ ক্যাম্পাসে বইছে আনন্দের বন্যা। এ যেন বিশ্ব জয়ের আনন্দ। এখন লক্ষ্য জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। প্রয়োজন এমপিওভুক্তি আর সরকারের সু-নজর। এ সফলতা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন কলেজের।
শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্তরিকতা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণের ফলে এমন সফলতা অর্জন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
তিস্তার কোল ঘেঁষে ভঙ্গুর রাস্তাঘাট, দুর্বল অর্থনীতি, অপ্রতুল অবকাঠামো নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কলেজটি। স্বপ্ন এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আলোর পথ দেখানো। প্রতিষ্ঠার ৪ বছরেও সরকারি বেতন ভাতা না পেলেও পাঠদানে কোনো অবহেলা করেননি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকবৃন্দ। প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে জ্ঞান বিস্তারে নিজেদের মেলে ধরেছেন তাঁরা। তারই ফলশ্রুতিতে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ১০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৩ জন পাস করে। ৬৯.৫২% ফলাফল নিয়ে উপজেলায় নন-এমপিও সাধারণ কলেজের মধ্যে উক্ত কলেজটিই শ্রেষ্ঠ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলে ক্রমান্বয়ে জেলার মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দৃঢ় প্রত্যাশা।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তিস্তা নদীর কোল ঘেষে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আলোর পথ দেখাতেই স্থানীয় বিদ্যানুরাগীদের উদ্যোগে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন কলেজটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। স্থানীয়রা তারই নামে নামকরণ করে প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে কলেজটিতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ ২৫ জন শিক্ষক কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। ছাত্রছাত্রী ৩৫২ জন।
শনিবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সবার চোখে আনন্দে উজ্বল। এ বিষয়ে শিক্ষক আবু সায়েমের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক শিক্ষা প্রতিনিধির। আবু সায়েম বলেন, আমরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। বেতনভাতা না থাকায় বাজারে গিয়ে সন্তানের জন্য ভালো কিছু কিনতে পারি না। শিক্ষিত হয়ে মানুষের বাড়িতে কাজও করতে পারি না। সরকারের উচিৎ আমাদের দিকে নজর দেয়া।
অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমরা ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২৫ জন শিক্ষক কর্মচারী শ্রম দিয়ে আসছি। বর্তমানে ৩৫২ ছাত্রছাত্রী প্রতিষ্ঠানটিতে পড়ালেখা করেছে। তারা যেন ভালো ফলাফল করতে পারে সে জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতি বছরই আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট উপহার দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। গ্রামের কলেজ হওয়ায় ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না, তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা আশা করছি, আগামী বছরে আরো ভালো রেজাল্ট হবে। যদি কলেজটি এমপিওভুক্ত করা হতো, তাহলে আমরা জেলার মধ্যে সেরা হতাম। সেই সঙ্গে আমাদের সাংসদ মোতাহার হোসেন এমপির সার্বিক সহযোগিতায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।