এইচএসসির উত্তরপত্র জালিয়াতিতে জড়িত ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী - দৈনিকশিক্ষা

বরিশাল বোর্ডএইচএসসির উত্তরপত্র জালিয়াতিতে জড়িত ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী

বরিশাল প্রতিনিধি |

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় বরিশাল বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (বরিশাল) পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরপত্র জালিয়াতির সঙ্গে বোর্ডের কমপক্ষে দু’জন কর্মকর্তাসহ অর্ধডজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। উত্তরপত্র ব্যবস্থাপনায় অবহেলা-উদাসীনতা ঘটনার জন্য ১০টি ত্রুটি চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি।

বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস বলেছেন, বোর্ডের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং কাজ কর্মে শৃঙ্খলা ফেরাতে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সব দপ্তরে রদবদল করে ঢেলে সাজানো হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে বলেছেন, এখনই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হলে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

এদিকে উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনার কিনারা করতে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম বাদী হয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানায় যে মামলা দায়ের করেছিলেন, সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন বরিশাল সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ২৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে ওই মামলার (মামলা নং- ৩৩/১৯) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছেন তিনি।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি বছরের এইসএসসি পরীক্ষার উচ্চতর গণিত প্রথম পত্রের ১৮টি উত্তরপত্র জালিয়াতির সঙ্গে ১৮ শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্য যারা জড়িত তারা সবাই বরিশাল বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন আছেন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা। অন্যরা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে জালিয়াতির সঙ্গে বোর্ডের যারা সংশ্লিষ্ট তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ঘটনার শুরুতে চিহ্নিত জালিয়াত চক্রের অন্যতম বোর্ডের উত্তরপত্র শাখার বরখাস্ত হওয়া অফিস সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পালের বক্তব্য তদন্ত কমিটি গ্রহণ করতে না পারায় অন্য কারা জড়িত সে ব্যাপারে তদন্ত কমিটি কিংবা বোর্ডের কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে অভিযোগ আছে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পরপরই দু’জন কর্মকর্তা ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন। ওই দুই কর্মকর্তা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আছেন এমন গুঞ্জনও আছে বোর্ডের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

বোর্ড সূত্র জানায়, উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বোর্ডের ৪/৫জন কর্মকর্তাসহ পরীক্ষা শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। তবে পরীক্ষা শাখা তথা উত্তরপত্র শাখার বরখাস্ত হওয়া উচ্চমান সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পালের নাগাল পায়নি তদন্ত কর্তৃপক্ষ। উচ্চতর গণিত বিষয়ের দ্বিতীয় পত্রের উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পরপরই গত ৮ আগস্ট গোবিন্দ চন্দ্র পালকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে গোবিন্দ পলাতক। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট ১৮ পরীক্ষার্থীকে তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দেয়ার জন্য বলা হলেও তাদের মধ্যে একজন পরীক্ষার্থী এবং ১৩ জন অভিভাবক তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ওই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি ছাড়াও ১০ দফা ত্রুটি চিহ্নিত করেছেন তদন্ত কমিটি। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বোর্ডের গোপনীয় শাখা, পরীক্ষা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে একই ব্যক্তি একই পদে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করা, উত্তরপত্র কক্ষে সিসি ক্যামেরা না থাকা, জনবল সংকট, তদারকির অভাব প্রভৃতি। সূত্র জানায়, বরখাস্ত হওয়া উচ্চমান সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পাল ২০ বছর ধরে পরীক্ষা শাখায় কর্মরত ছিলেন।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় এ বছরের ১৭ জুলাই। তবে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের (প্রথম পত্র) উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় ১৮ পরীক্ষার্থীর ফল স্থগিত রাখে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। পরে বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশে ওই পরীক্ষার্থীদের চলতি বছরের ফলাফল বাতিল এবং পরবর্তী ৩ বছরের জন্য তাদের পরীক্ষার সুযোগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উত্তরপত্র শাখার অফিস সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পালকে। জালিয়াতির সঙ্গে আর কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে গত ১৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বরিশাল) অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038111209869385