চোয়ালে কলম চেপে লিখে এবার বৃত্তি পেয়েছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের লিতুন জিরা। জন্ম থেকেই তার দুটি পা নেই। দুই হাতও নেই কনুইয়ের ওপর থেকে। তবু লেখাপড়ার অদম্য চেষ্টা ছিল মেয়েটির। লেখার জন্য ডান বাহু দিয়ে কলম চেপে ধরে চোয়ালে। এভাবে লিখেই এবার সে বসেছিল প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায়।
তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘লিতুন অত্যন্ত মেধাবি ছাত্রী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে সে ৫৭১ পেয়েছে। ৫৭৫ নম্বর থেকে মেধা কোটায় বৃত্তি (ট্যালেন্টপুলে) শুরু। আর লিতুন ৫৭১ নম্বর পেয়ে সাধারণ কোটায় বৃত্তি পেয়েছে। এজন্য তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সেই তার এই বিরল কীর্তির জন্য তাকে সাধুবাদও জানাই। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, অসাধ্য সাধন করার ক্ষেত্রে পরিশ্রম এবং ইচ্ছাশক্তি একটি মহৎ গুণ। লিতুন জিরার মতো অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা পরিশ্রম এবং ইচ্ছাশক্তির জোরে পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করছে। ইচ্ছাশক্তি এবং মনের জোর দুটো থাকলে যে অসাধ্য সাধন করা কোন ব্যাপার নয় বা অসম্ভব কিছুই নয়, তার একটি প্রকৃত উদাহরণ হলো লিতুন জিরা। সে যে থেমে থাকেনি এবং নিজ চেষ্টাতেই বৃত্তি পেয়েছে- সেটা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সবার জন্য।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা এমন হয়ে গেছে যে, লিতুন জিরা বা তার মতো আরও যারা আছে তাদের আর ১০ জনের মতো স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে মেনে নেয় না বা স্বীকৃতি দেয় না। এটা হচ্ছে আমাদের মানসিকতার সমস্যা। এছাড়া আমাদের চিন্তা-ভাবনায়ও রয়েছে অনেক ঘাটতি। সেগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যারা শারীকিভাবে কিছুটা দুর্বল তাদের আর ১০ জনের মতোই স্বাভাবিক মানুষ মনে করতে হবে।
লিতুন জিরার মতো সমাজে খোঁজ করলে আরও পাওয়া যাবে। তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর চেয়ে তাদের উৎসাহিত করাই হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সর্বোত্তম পদক্ষেপ।