এক কক্ষের বিদ্যালয়! - Dainikshiksha

এক কক্ষের বিদ্যালয়!

বরিশাল প্রতিনিধি |

১৮ ফুট বাই ১২ ফুট আয়তনের ছোট একটি কক্ষ। এর একপাশে চলে পাঠদান, অন্যপাশে দাপ্তরিক কার্যক্রম। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাচীন পাঠশালার গল্প নয়, এটি বরিশাল পলিটেকনিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। দেশের দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যখন কাজ করছে সরকার, তখন বরিশাল মহানগর এলাকার সরকারি বিদ্যালয়ে শুধু একটি ভবনের অভাবে এমন দৈন্যদশা চলছে গত চার বছর ধরে। এ চার বছরে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ শুধু চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। নিজস্ব জমি না থাকায় নতুন ভবন বরাদ্দ পাওয়া নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। সরকারি কর্মকর্তারা এ জন্য একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। এসব নানা কারণে অস্তিত্ব হারাতে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি। চার বছর আগে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ছিল ২৫২ জন। এখন আছে মাত্র ২৫ জন। 

নগরীর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসের মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচতলায় বিদ্যালয়টি এভাবে পরিচালিত হচ্ছে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর থেকে। গত মঙ্গলবার সেখানে গেলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাজেদা ইয়াসমিন পলিটেকনিক ক্যাম্পাসের পুকুরের উত্তর পাড়ে জরাজীর্ণ চার কক্ষের একটি পাকা ভবন দেখিয়ে বললেন, ওটিই ছিল বিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলে আবাসিক কোয়ার্টারে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। 

উপস্থিত শিক্ষকরা জানালেন, প্রথম দুই বছর একটি কক্ষ নিয়েই বিদ্যালয় চলেছে। গত বছর আরও দুটি কক্ষ দিয়েছে  পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ। কক্ষ সংকট থাকায় দুটি শিফটে ভাগ করে সকালে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং বিকেলে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস পরিচালনা করা হয়। বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর প্রথম কক্ষটিতে তিন সারিতে রাখা ছয়টি বেঞ্চে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত। কক্ষটির অন্যপাশ লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহূত হয়। পাঁচজন শিক্ষকের জন্য রাখা হয়েছে পাঁচটি চেয়ার। একই কক্ষের মধ্যে লাইব্রেরি ও দুটি শ্রেণির ক্লাস কীভাবে পরিচালিত হয়, জানতে চাইলে এর উত্তর মেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা জেনে। চতুর্থ শ্রেণিতে দু'জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র একজন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ে সর্বাধিক শিক্ষার্থী আটজন প্রাক্‌-প্রাথমিক শ্রেণিতে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে চারজন করে আর তৃতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী আছে দু'জন। 

১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন সহকারী শিক্ষক পুর্ণা রাণী মিস্ত্রী। তিনি জানান, বিদ্যালয়টি দুরবস্থায় পড়লে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। এমনকি পলিটেকনিক আবাসিক কোয়ার্টারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে পাঠান। অথচ তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে পলিটেকনিকের জমিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। নতুন ভবন পাওয়ার ক্ষেত্রে সেটাই এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আবিদা সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে। জমির মালিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। গত চার বছরে সরকারি দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বুঝেছি বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি না হলে নতুন ভবন বরাদ্দ হবে না। এখন সরকারি দপ্তরগুলোতে ধরনা দিচ্ছি বিদ্যালয়টি কোনো খাস জমিতে স্থানান্তর করা যায় কি-না। 

আবিদা সুলতানা বলেন, নগরীর ১৪ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এর যে কোনো একটি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলে প্রতিষ্ঠানটি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন খলিফা বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এর উত্তর আজও মেলেনি। এ ক্ষেত্রে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষর সদিচ্ছারও অভাব আছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। 

বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সৈয়দ নুরুন্নবী পদাধিকার বলে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে আবাসিক কোয়ার্টারের একটি ফ্লোর ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভবন বরাদ্দ পেতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি থাকতে হবে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় ছাড়া সম্ভব নয়।

 

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032768249511719