এক বছরের মধ্যে দেশের সব হোটেল, মোটেল এবং রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সব উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বিপণন এ সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) ১১টি সংগঠনের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন।
এছাড়া পলিথিন ও দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, কারখানা বন্ধ এবং যন্ত্রপাতি জব্দকরণের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ব্যাগের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞার পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারকে বলা হয়েছে। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমেদ কবীর।
রিট আবেদনে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ লাখ ৯৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) জরিপ অনুযায়ী বার্ষিক ৮৭ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বাংলাদেশে ব্যবহূত হয়। দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্লাস্টিকের স্ট্র, কটনবাড, ফুড প্যাকেজিং, ফুড কনটেইনার, বোতল, প্লেট, প্লাস্টিক চামচ ও ব্যাগ ইত্যাদি। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে এসব প্লাস্টিক কৃষি জমি, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নদী-নালা, খাল-বিল ও সমুদ্রে পতিত হয়ে এসব প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি করছে।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী পদ্মা নদীর মাধ্যমে প্রায় ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর মাধ্যমে প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় বঙ্গোপসাগরে মাছের পেটে এবং লবণের মধ্যে ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা প্রাণিকুল ছাড়াও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ ও রোধে বিভিন্ন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ধারা ৬(ক) এর অধীন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। একই সঙ্গে এসব প্লাস্টিকের নিরাপদ বিকল্প চালু করতে কেন একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।