খুব ছোট বয়স থেকে শেখবাড়ির সদস্য বেগম ফজিলাতুননেসা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনন্য জীবনসঙ্গী। তাঁর উজ্জলতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উচ্চতায়ও ছায়া ফেলেছিল। পারিবারিক সব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতির জনকের রাজনৈতিক বলয় ও ক্রিয়াকর্মে তিনি ছিলেন শক্তিদাত্রী ও সুপরামর্শক। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বর্বর ঘাতকরা হত্যা করে রাজনীতি সচেতন নারী বেগম মুজিবকেও।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুযোগ্য সাথী হয়ে উঠেছিলেন ফজিলাতুন্নেসা। টুঙ্গীপাড়ার রেনু একেবারে ছোট বয়সে মাকে হারালে মাতৃস্নেহে পুত্রবধূ হিসেবে তাকে আপন করে নেন বঙ্গবন্ধুর মা। সেই থেকে তিনি শেখ বাড়ির সদস্য। বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা ঘটনায় তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি বারবার সকলকে নাড়া দিয়ে গেছে। কিন্তু পঁচাত্তরে মধ্যরাতের নৃশংসতা তাকেও স্তব্ধ করে দেয়।
বেগম ফজিলাতুননেসা নিজ গুণেই প্রমাণ করেছিলেন, সহধর্মিনী হিসেবে, শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার জন্য তিনি কেমন সাহচর্য দিয়েছেন, কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যুগিয়েছেন কতটা শক্তি ও সাহস। নিভৃতচারী এই নারী আপন রাজনৈতিক বীক্ষায় বলীয়ান হয়ে ওঠাতেই হয়তো ঘাতকরা তাকেও রেহাই দেয়নি।
পারিবারিক সব দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়ার পাশাপাশি, মাতৃসুলভ মন নিয়ে সবসময় এসে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও কর্মীদের পাশে।
বেগম মুজিবের বুদ্ধিমত্তা ও স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। বঙ্গবন্ধু যতবার গ্রেফতার হয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে দেখা করার বাহানায় জেলখানায় গিয়ে তাঁকে আন্দোলনের সব খবর ও ঘটনা জানিয়ে আসতেন তিনিই। সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থেকেও তাঁর বিচক্ষণতা বঙ্গবন্ধুকে নানা জটিল সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে।
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানিরা আক্রমণ শুরু করেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলে, আটক করা হয় তাকেও। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস সন্তানদের নিয়ে ধানমণ্ডির একটি বাড়িতে বন্দি থাকেন বেগম মুজিব।
দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে, দেশ পরিচালনা ও দেশ গড়ার সংগ্রামেও সার্বক্ষণিক তাঁর পাশে ছিলেন ফজিলাতুন্নেসা। কিন্তু দেশবিরোধী ক্রীড়ণকদের পৈশাচিক বর্বরতা শেষ করে দেয় সবকিছু। ঘাতকদের ব্রাশফায়ারে বিদীর্ণ হন বেগম মুজিব।