মূলপদ ‘সহকারী শিক্ষক’। গভর্নিং বডির সুবিধার জন্য এই সহকারী শিক্ষককেই ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ২০১০ সালে স্কুলটি কলেজ হিসেবে অনুমোদন নিলেও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি গভর্নিং বডি। ৯ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কলেজটি। শুধু মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ নয়, রাজধানীতে ৭০টি কলেজ চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। আর সারাদেশে এমন কলেজের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যান। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজেও এক যুগের বেশি সময় ধরে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মিরপুরের বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজ ও দনিয়া কলেজের চিত্রও একই। এসব কলেজে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ না থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত অধ্যক্ষ দিলে হয়ত তিনি অনুগত নাও হতে পারেন। এই শংকায় নিয়মিত অধ্যক্ষ দিচ্ছে না এসব কলেজের গভর্নিং বডি। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কার্যক্রম চালু রাখলে গভর্নিং বডির সব দাবি খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গভর্নিং বডির সদস্যরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত কয়েকটি দায়িত্ব নিয়মিত পালন করেন। প্রথমতঃ প্রতিষ্ঠানের সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষের সঙ্গে ব্যাংক চেকে সভাপতির স্বাক্ষর থাকতে হয়। এই লেনদেন ইচ্ছেমতো করেন সভাপতি। বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে তছরুপ করা হয় প্রতিষ্ঠানের ফান্ড। অধ্যক্ষ কোনো কাজে স্বাক্ষর না দিতে চাইলে তাকে সরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এই ভয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা নিরব থাকেন। নিয়মিত অধ্যক্ষ থাকলে তাকে সরিয়ে দেয়া কঠিন এই কারণে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগে গভর্নিং বডির যত ভয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা বিপাকে পড়লে অজুহাত হিসেবে নিজেদের ভারপ্রাপ্ত বলেই চালিয়ে দিচ্ছেন। আবার গভর্নিং বডিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন। কোনো সমস্যা হলে একজন ভারপ্রাপ্তকে সরিয়ে আরেক জনকে দায়িত্ব দিচ্ছেন গভর্নিং বডি। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের জুনে জারি করা এমপিও নীতিমালার জনবল কাঠামোতে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের যোগ্যতা এবং বেতন গ্রেড নিয়ে যে নির্দেশনা রয়েছে তা নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো আপত্তি জানায়। এতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে বলে জানান তারা। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন ও নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আগে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। এজন্য গত বছরের আগস্ট মাসে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নীতিমালা সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে মন্ত্রণালয়।
এর আলোকে মঙ্গলবার ঢাকা বোর্ডের এক পরিপত্রে বলা হয়, কলেজ এখন আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলবে না। আদেশে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করেছে। সেখানে বর্ণিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিধিমোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে আগামী তিন মাসের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হলো।