একই ঠিকাদারকে কাজ দিতে অবাস্তব শর্ত - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়একই ঠিকাদারকে কাজ দিতে অবাস্তব শর্ত

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ওএমআর ফরম ও উত্তরপত্র সরবরাহের কাজ নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে দিতে আবারও পাঁয়তারা শুরু করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য দরপত্রে অবাস্তব সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ওই সব শর্ত পূরণ করার সামর্থ্য ওই নির্দিষ্ট কম্পানি ছাড়া অন্য কারো নেই। রোববার (১৭ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এমনকি দুর্নীতি রোধ করতে বেশির ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাতে হাতেই দ্বৈত খামে শেষ করছে দরপত্রপ্রক্রিয়া।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর দুই কোটি ওএমআরসহ উত্তরপত্র এবং আড়াই কোটি অতিরিক্ত উত্তরপত্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দরপত্রের শর্ত হিসেবে গত বছরের মধ্যে ওএমআর ফরমসহ উত্তরপত্র সরবরাহের একক কার্যাদেশে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা এবং এ বিষয়ে মোট ৫০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড একই ধরনের খাতার দরপত্র আহ্বান করে। তবে কেউ একসঙ্গে ২০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে কাজ পাচ্ছে ‘মাস্টার সিমেক্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরও একই পরিমাণ উত্তরপত্র তারা প্রায় ৪২ কোটি টাকায় সরবরাহ করেছিল। এখন তাদের ছাড়া অন্য কারো দরপত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগই থাকছে না।

জানা যায়, ২০১৬ সালের দরপত্রে কাজ পেয়েছিল মাস্টার সিমেক্স। ওই সময় অপেক্ষাকৃত কম দর দাখিল করার পরও এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংকে কারিগরি কারণে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তখন সর্বনিম্ন দরদাতা না হয়েও কাজ পায় মাস্টার সিমেক্স।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এবারও মাস্টার সিমেক্সকেই কাজ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চক্র। অভিযোগ আছে, দরপত্র কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রতিবারই কাজ বাগিয়ে নেয় মাস্টার সিমেক্স।

গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক ঠিকাদার যাতে বারবার কাজ না পায়, প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন ঠিকাদার যাতে কাজ পায়, সেই সুযোগ রাখার কথা বলেছেন তিনি।’ অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একই ঠিকাদারকে কাজ দিতে এবার শর্তেও পরিবর্তন এনেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাস্টার সিমেক্সকে কাজ দিতে দরপত্রের শর্ত জটিল করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে ২০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয় না। একসঙ্গে বেশি অঙ্কের টাকার কাজ রাখায় মাস্টার সিমেক্স ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দরপত্রে অংশ নেওয়ারই সুযোগ থাকছে না।

এ ছাড়া তিন বছরের মধ্যে একক কার্যাদেশে এক কোটি ওএমআর ফরম সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত দেওয়া হয়েছে। অন্য বোর্ডগুলো একসঙ্গে এত বড় দরপত্র আহ্বান না করে বিভিন্ন লটে ডাকে। ফলে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একক কার্যাদেশে এক কোটি ওএমআর ফরম সরবরাহের অভিজ্ঞতা নেই।

দরপত্রের শর্তে বলা হয়েছে, একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে দুটি অনলাইন লিথোকোড মেশিন থাকতে হবে। অন্যান্য বোর্ড ওএমআরের আকার ৮.৫ ইঞ্চি ও ১১ ইঞ্চি এবং খাতার আকার ৮.৫ ইঞ্চি ও ১১.৫০ ইঞ্চি চাইলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ওএমআরের সাইজ ৮.৫ ইঞ্চি ও ১১.৬৯ ইঞ্চি এবং খাতার সাইজ চেয়েছে ৮.৫ ইঞ্চি ও ১১.৭৫ ইঞ্চি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই সাইজের খাতা মাস্টার সিমেক্সের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।

সূত্র মতে, মাস্টার সিমেক্স প্রতিবছর কাজ পেলেও তারা এক মাপের সব খাতা সরবরাহ করে না। তারা প্রথমে নির্দিষ্ট মাপের খাতা সরবরাহ করে। এরপর অন্য বোর্ডের মাপ অনুযায়ীই খাতা সরবরাহ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তাদের কিছুই বলা হয় না।

এ ছাড়া সরকারের ক্রয়নীতি অনুযায়ী সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ই-জিপির মাধ্যমে ই-টেন্ডার করার নিয়ম থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করছে দ্বৈত খামের মাধ্যমে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতেই তারা ই-জিপিতে যেতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দরপত্রে নির্দিষ্ট কম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে নতুন শর্ত আরোপ করায় এই খাতের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে বাস্তবতার নিরিখে শর্ত আরোপ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসের চিঠিতে বলা হয়েছে, শর্তের কারণে মাস্টার সিমেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজটি পাবে। বাস্তব শর্ত আরোপ করা হলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

এলিট প্রিন্টিংয়ের পরিচালক মো. আশরাফ আলী বলেন, ‘গত বছর আমাদের প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দর দিলেও কাজ পায়নি। এবারও দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে নানা অবাস্তব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।’

প্রিন্ট মাস্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দরপত্রের শর্তগুলো দেখলেই বোঝা যায়, নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে লিথোকোড এবং ওএমআর ফরম তৈরির কাজ করা ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি দরপত্রে আরোপিত অবাস্তব শর্তের সংশোধন চায়। খাতা সরবরাহের এত বড় কাজ প্যাকেজ আকারে দেওয়া উচিত। অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর খাতার মাপেই তাদের কাগজ কেনা উচিত।’

বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, দরপত্রের বেশ কিছু শর্ত দেখে মনে হয়েছে, বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েই টেন্ডার শিডিউল প্রণয়ন করা হয়েছে, যা উন্মুক্ত দরপত্রের পদ্ধতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করার জন্য কার্যাদেশের যৌক্তিকতা বোধগম্য নয়। এই কাজের জন্য লটভিত্তিক টেন্ডারপ্রক্রিয়া অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন লটে উত্তরপত্র সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে; বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও মালামাল সংগ্রহ ও মজুদের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান বলেন, ‘প্যাকেজ করে বিভিন্ন কম্পানিকে কাজ দিলে খাতার মানের ভিন্নতা হতে পারে। এ জন্য এক লটে কাজ দেওয়া হয়। আর গত বছরের মতোই এবারও একই মাপের খাতা চাওয়া হয়েছে।

যাদের নির্দিষ্ট মেশিন রয়েছে তাদেরই কাজ পাওয়া উচিত। নইলে ঝুঁকিতে পড়তে হবে। আর ই-জিপির জন্য এখনো আমাদের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। আমরা শিগগিরই ই-জিপিতে যাব।’

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010318040847778