লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বৈরাতি দাখিল মাদরাসা থেকে ২ জন ভুয়া জেডিসি শিক্ষার্থী শনাক্ত হয়েছে। গত বুধবারের পরীক্ষা এই মাদরাসার ২২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীর প্রমাণ পাওয়া যায়। এর আগে প্রথম দিনের জেডিসি পরীক্ষায় এই মাদরাসার ৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
ভুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন কালীগঞ্জ উপজেলার বাবর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সিতুলী বেগম জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। জেডিসি পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ২৩৮৭৮৪। আরেক ছাত্রী আফসিন খাতুন । তিনি করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩ দশমিক ৪৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনিও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। আফসিন খাতুনের রোল নম্বর ২৩৮৭৮৬।
জানা গেছে, জেডিসি পরীক্ষা শুরু হলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি দাখিল মাদরাসা থেকে ২২ জন জেডিসি পরীক্ষার্থীর জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে। উপজেলার কাকিনাহাট মোস্তাফিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্র থেকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর দিনেই ওই মাদরাসার ৬ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। বাকী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে এলে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তার চোখে শিক্ষার্থীদের অনেকের বয়সের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনেকেই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থী।
বৈরাতি এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুই তিন বছর থেকেই মাদরাসাটি বন্ধ রয়েছে। জরাজীর্ণ মাদরাসা ঘরটির ভিতরে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বখাটেরা জুয়ার খেলার আসর বসান । স্থানীয় বাসিন্দা সমসের আলী (৬৫) দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, মাদরাসাটি প্রথম প্রথম কিছুদিন চলছিল। অনেকদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, এটি তৈরি হয়েছে জুয়া খেলার জন্য।
ভুয়া জেডিসি পরীক্ষার্থী সিতুলী বেগমের মা সাদেকা বেগম (৪৫) দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মেয়েকে ৫০০ টাকা দিয়ে আবুল কাশেম পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন। তিনি বুঝতে পারেননি যে এটা অন্যায়।
এ ব্যাপারে বৈরাতী দাখিল মাদরাসা সুপার ফাতেমা বেগমের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে রংপুরে অবস্থান করছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
কাকিনাহাট মোস্তাফিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রের সচিব মো. সাহেদার রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শারীরিক গঠন দেখে প্রথমে সন্দেহ হয়। এরপর বিষয়টি কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়
কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ একাডেমিক সুপারভাইজার মো. জাকির হোসেন বলেন, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২ জন যে ভুয়া এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মো. রবিউল হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বয়স প্রমাণের জন্য ওই মাদরাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সকল শিক্ষার্থীর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সদনসহ প্রমাণ নিয়ে ১২ নভেম্বর সুপারকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তিনি আসেননি। বুধবার (১৩ নভেম্বর) তাকে আবারও চিঠি দেয়া হয়েছে। সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।