একই লোকের কি বারবার করোনা হতে পারে? - দৈনিকশিক্ষা

একই লোকের কি বারবার করোনা হতে পারে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এই প্রশ্নের কোনো সুনিশ্চিত উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তি একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার শরীরে এই ভাইরাসপ্রতিরোধী যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা প্রথম দিকে কিছুটা দুর্বল থাকে। কিন্তু এ কারণে আবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে কোনো কোনো ব্যক্তির দ্বিতীয়বার করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যদিও এ ধরনের ঘটনা বিরল। রোববার (২৬ জুলাই) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, তবে যেটা হয়, তা হলো, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর বেশ কিছুদিন এর জের চলতে থাকে। দুর্বলতা, এমনকি মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্টও হয়। এগুলো সাধারণত করোনার লক্ষণ হিসেবেই সবাই জানেন। করোনা সেরে যাওয়ার পর এক-দেড় মাস পর্যন্ত এ ধরনের সমস্যা কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়।

যদি আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার করোনা পজিটিভ হন, তাহলে তো মহাবিপদ। কারণ এ রকম চলতে থাকলে কোনো দেশই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারবে না। এমনকি টিকা আবিষ্কারেও কাজ হবে না। কারণ প্রতিরোধী হওয়ার পরও তো আবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। কিন্তু কার্যত কোনো কোনো দেশ তো ইতোমধ্যেই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে বা করতে চলেছে। তাই বলা যায়, বারবার করোনা পজিটিভ হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সেটা খুবই বিরল ঘটনা।

সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির অধিকাংশ ক্ষেত্রে হালকা লক্ষণ ও সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হয়। অন্যদের মধ্যে যেন সংক্রমণ না ঘটে, সে জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন (আইসোলেশন) রাখতে হয়। অনেকে কিছুদিন পর ভালো হয়ে ওঠেন। তবে সমস্যা জটিল হলে হাসপাতালে যাওয়া দরকার। পরে ভালো হয়ে গেলেও সমস্যা কিছু থেকেই যায়।

সে জন্য বলা হয়, করোনা সেরে যাওয়ার পর কিছুদিন, অন্তত দুই সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রামে থাকা ভালো। কারণ করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের যে ক্ষতি করে, তা পুষিয়ে নিতে সময় লাগে। বিশেষভাবে কোনো কোনো ব্যক্তির রক্তের হিমোগ্লোবিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে তার রক্তের লোহিত কণিকাগুলো দেহে ঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। করোনামুক্ত হওয়ার পর রক্তের এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দু-চার সপ্তাহ লাগতে পারে।

এসব বিষয়ে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় ২২ জুলাই একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এই পত্রিকার বিজ্ঞান ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদক অপূর্ভা ম্যানডাভিলি (Apoorva Mandavilli) তাঁর লেখায় বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের উল্লেখ করে মূলত বলেছেন, একই ব্যক্তির দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। তবে এটা ঠিক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পরও আবার শ্বাসকষ্ট বা এ ধরনের কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

সিঙ্গাপুরের ডিউক এনইউএস মেডিকেল স্কুলের ভাইরোলজিস্ট ড.অ্যান্টোনিও বারটোলেট্টি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যে আগে থেকেই রোগপ্রতিরোধী কিছু অ্যান্টিবডি থাকে। হয়তো সাধারণ সর্দি-কাশি হয়, এমন ধরনের কোনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণে তাদের এই রোগপ্রতিরোধক জন্মেছে। এই টি-সেলগুলো হয়তো কোভিড-১৯ সম্পূর্ণরূপে প্রতিহত করতে পারে না, কিন্তু রোগের আক্রমণ দুর্বল করে দেয়। এ কারণেই হয়তো কোনো কোনো ব্যক্তির কোভিড-১৯-এর উপসর্গগুলো খুব হালকা বা একেবারেই দেখা যায় না। তাঁর গবেষণালব্ধ এই ধারণা যদি সঠিক হয়, তাহলে কেন কারও কারও উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯ দেখা যায়, তার একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি
কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার প্রায় একই মাত্রায় রয়েছে। সামান্য কম-বেশি হলেও গড়ে প্রায় সমান। যদিও সম্প্রতি প্রতিদিনের রক্ত পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে, কিন্তু আমরা এই কম সংখ্যার মধ্যেও শতকরা হার হিসাব করলে মোটামুটি একটি ধারণা পাই। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, প্রাপ্ত ফলাফল শুধু সেই ব্যক্তিদেরই রক্ত পরীক্ষার ফল, যাদের কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ রয়েছে। যদি পরিসংখ্যান তত্ত্বের নিয়ম অনুযায়ী সারা দেশের মানুষকে গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন বিচার-মানের (ক্রাইটেরিয়া) ভিত্তিতে দৈবচয়নের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করা হতো, তাহলে দেশে করোনার প্রকোপের একটি সঠিক চিত্র আমরা হয়তো জানতে পারতাম। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়, আমরা যদি বেশি উপদ্রুত এলাকায় নিয়ম অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়ন করি এবং মাস্ক ব্যবহার ও সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটি আয়ত্ত করি, তাহলে করোনাভাইরাস হয়তো নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তাই জনসচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বন্যার দুর্যোগ
দুর্ভাগ্য যে এই করোনার মধ্যে এখন বন্যার বাড়তি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া এখন জরুরি। কারণ, বন্যার জন্য সুপেয় পানির অভাবে অন্যান্য অসুখ-বিসুখ দেখা দিতে পারে। তাহলে সমস্যা জটিল হবে। আশা করি, সমন্বিত চেষ্টায় এই দুর্যোগ আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।

লেখক : আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037839412689209