একাত্তরের যুদ্ধ মুক্তির, নাকি স্বাধীনতার - দৈনিকশিক্ষা

একাত্তরের যুদ্ধ মুক্তির, নাকি স্বাধীনতার

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী |

একাত্তরের যুদ্ধ মুক্তির ছিল, নাকি স্বাধীনতার? উভয়েরই। ৭ মার্চের সেই বিখ্যাত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান দুয়ের কথাই বলেছিলেন—‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ তখন এবং যুদ্ধের পরেও এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। কিন্তু পার্থক্য নিশ্চয়ই ছিল। না হলে পরে জিয়াউর রহমানের সময় সংবিধানে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে ‘মুক্তি’ সরিয়ে নিয়ে সে জায়গায় ‘স্বাধীনতা’ বসানো হলো কেন, কেন প্রয়োজন পড়ল এই সংশোধনের? স্মরণ করা যাক, আমাদের আদি সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরুতে এক নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছিল, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করিয়াছি। ’ ১৯৭৮ সালে জারি করা এক ফরমানের বলে সংবিধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রস্তাবনার ওপরে লেখা হয়েছে, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ এবং প্রথম অনুচ্ছেদের যেখানে ছিল ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম’-এর কথা, সেখানে তা বদল করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ। ’ শুধু তাই নয়, এরপর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে যেখানে অঙ্গীকারের কথা আছে, সেখানেও ‘জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম’ কেটে বসানো হয়েছে ‘জাতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ’।

সেই সঙ্গে যোগ করা হয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার কথা এবং বাদ দেওয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আদি সংবিধানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ছিল এবং তার স্থান ছিল জাতীয়তাবাদের পরেই। অর্থাৎ প্রথম অঙ্গীকার জাতীয়তাবাদের, দ্বিতীয় অঙ্গীকার সমাজতন্ত্রের। সংশোধনীতে সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়া হয়নি সত্য, কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সব শেষে এবং সমাজতন্ত্র বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। সমাজতন্ত্র অর্থ ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার। ’ আদিতে নাগরিকদের জাতীয়তাবাদ ছিল বাঙালি, সংশোধনের ফলে তা দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশিতে। সংবিধানের দুটি পাঠ ছিল, একটি বাংলা, অপরটি ইংরেজি। বলা হয়েছিল অর্থের ব্যাপারে দুই পাঠের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাংলা পাঠই গ্রাহ্য হবে। ১৯৭৮ সালের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, বিরোধের ক্ষেত্রে ইংরেজি পাঠই প্রাধান্য পাবে। সংশোধনগুলো মোটেই পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়; তারা একটি অভিন্ন চিন্তাধারার প্রতিফলন বটে। ওই চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে আছে একেবারে সূচনায়ই, প্রস্তাবনার সংশোধনীতেই যেখানে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামকে রূপান্তরিত করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধে’। ব্যাপারটা যত নিরীহ মনে হয়, তত নিরীহ নয়। যুদ্ধ একাত্তরের ব্যাপার বটে, কিন্তু সংগ্রামের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, সংগ্রাম একাত্তরে শুরু হয়নি, শেষও হয়নি। ১৯৭৮ সালে যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত তাঁরা যুদ্ধটাকেই দেখতে চেয়েছেন সংগ্রামকে উপেক্ষা করে। যুদ্ধে তাঁরা ছিলেন, সংগ্রামে ছিলেন না। আর মুক্তি ও স্বাধীনতা যে এক নয় তা-ও তারা খেয়াল করেছেন। মুক্তি অনেক ব্যাপক ও গভীর ব্যাপার। স্বাধীনতা বলতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বোঝানো সম্ভব, কিন্তু মুক্তি বলতে বোঝাবে সার্বিক মুক্তি। হ্যাঁ, স্বাধীনতার জন্য লড়াই হয়েছে একাত্তরে। অবশ্যই। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধীনতা থেকে বের হয়ে এসে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। কিন্তু সেটা একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। অথবা বলা যায়, মূল লক্ষ্য ছিল অনেক বিস্মৃত। সেটা ছিল জনগণের মুক্তি। যে জন্য রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি সমাজতন্ত্রের উল্লেখ করতে হয়েছে, বলতে হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের কথা। অঙ্গীকার করতে হয়েছে এ চারটি মূলনীতি প্রতিষ্ঠার। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা প্রয়োজন ছিল ওই সর্বাত্মক লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যই। স্বাধীনতা প্রথম পদক্ষেপ, মুক্তি চূড়ান্ত লক্ষ্য। সংগ্রাম ছিল মুক্তির।

মুক্তির জন্য সংগ্রামটা দীর্ঘকালের। এ লড়াইয়ে নানা মানুষ এসেছে, সংগঠন এসে যোগ দিয়েছে। সবার ভূমিকা সমান নয়। নানা মাত্রার ও মাপের। কিন্তু সব স্রোত মিলেই বৃহৎ ধারাটি তৈরি। হঠাৎ করে অভ্যুত্থান ঘটেনি। ভুঁইফোড় নয়। একাত্তরে শুরু নয়, শেষও নয়। মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে এবং চলবে।

শেষ যে হয়নি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো ওই সংশোধনগুলো। ওগুলোর উদ্দেশ্য স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে সংগ্রামের লক্ষ্য অস্পষ্ট করে দেওয়া। মানুষকে ঠেলে দেওয়া পেছনে। মুক্তির সংগ্রামকে চিহ্নিত করা একটি সামরিক যুদ্ধ হিসেবে। মুক্তির সার্বিক যুদ্ধে একাত্তরের মুখোমুখি লড়াই একটা অত্যন্ত বড় মাপের ঘটনা, অত বড় ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।

সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ঘোষণাপত্র দিয়েছিল তাতে স্বাধীনতার কথা থাকার কথা নয়। নেইও। সেখানে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আছে। বলা হয়েছে, পাকিস্তান হবে একটি প্রজাতন্ত্র, যার প্রতিটি ইউনিট ছয় দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। ঘোষণাপত্রে ধর্মনিরপেক্ষতারও উল্লেখ ছিল না। তাই বলা হয়েছিল, ‘পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না। ’ সমাজতন্ত্রও ছিল না। বলা হয়েছিল, অর্থনৈতিক কর্মসূচির লক্ষ্য হবে ন্যায় ও সমতাভিত্তিক একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। এসব বক্তব্য জিয়াউর রহমান আনীত সাংবিধানিক সংশোধনগুলো থেকে দূরে নয়; কাছাকাছি। বোঝা যায়, ১৯৭০ সালে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কিন্তু নির্বাচনের পর বদলে গেছে সব কিছু। যা ছিল অস্পষ্ট ইচ্ছা, তা রূপ নিয়েছে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে। যে আকাঙ্ক্ষাকে ভয়ভীতি, পীড়ন-নিপীড়ন, লোভ-আশা দিয়ে অবদমিত করে রাখা হয়েছিল, তা সবেগে বের হয়ে এসেছে। ছয় দফা পরিণত হয়েছে এক দফায়। সেই এক দফা হলো রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তি। যার কথা ৭ই মার্চের সেই জনসভায় শেখ মুজিব বলেছিলেন। মুজিব তখন ব্যক্তি নন, তখন তিনি জনতার কণ্ঠস্বর।

মুক্তিযুদ্ধ ছিল ওই জনগণেরই যুদ্ধ। তারাই লড়েছে। কোনো একটি রণাঙ্গনে নয়, সর্বত্র, সব রণাঙ্গনে; শুধু দেশে নয়, বিদেশেও। বলা হয়েছে, যোদ্ধাদের ৮০ শতাংশই ছিলেন কৃষক। এ কোনো অতিরঞ্জন নয়। গ্রামে-গ্রামে, প্রান্তে-প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই যুদ্ধ। পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে কুটিল যারা তারা আশা করেছিল সংঘর্ষ সীমাবদ্ধ থাকবে। বেছে বেছে হত্যা করা হবে। কট্টর আওয়ামীপন্থী, ছাত্র, পুলিশ, বিদ্রোহী সেনা—তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে হত্যাকাণ্ড। কিন্তু পারেনি, নৃশংস সৈন্যদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারা বাছবিচার করেনি। আর জনগণও বসে থাকেনি। আক্রমণকে তারা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর আঘাত হিসেবে দেখেনি, দেখেছে তাদের নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবে। সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অংশ নিয়েছে যুদ্ধে।

জনগণই পাকিস্তান এনেছিল ভোট দিয়ে ১৯৪৬ সালে। তারাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে গেছে বায়ান্নতে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে স্পষ্ট রায় দিয়েছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে উনসত্তরের অভ্যুত্থান জনগণেরই অভ্যুত্থান বটে। মূল লক্ষ্য একটাই। মুক্তি। মুক্তির এ লক্ষ্য সামনে রেখেই একাত্তরের যুদ্ধ, যে যুদ্ধে পরাভূত হয়েছিল দুর্ধর্ষ বলে কথিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যুদ্ধের পেছনে যে চেতনা সেটা মুক্তির, যে মুক্তির সংজ্ঞা পাওয়া গেছে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে। মূলনীতি চারটি যুদ্ধে জনগণের অংশগ্রহণ থেকেই বের হয়ে এসেছে, স্বাভাবিকভাবে। না হলে কারো সাধ্য ছিল না তাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন—যুদ্ধের সময় ও তার অব্যবহিত পরে কারো সাধ্য ছিল না তাদের অস্বীকৃতি জানায়। শাসনক্ষমতা যখন জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেল, তখনই সম্ভব হয়েছে মূলনীতির সংশোধন। মুক্তির জায়গায় এসেছে স্বাধীনতা।

মুক্তির যুদ্ধ ছিল একটা স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম। স্বতঃস্ফূর্ততার বহু গুণ ও সীমাবদ্ধতা তার মধ্যে পাওয়া যাবে। প্রধান গুণ হচ্ছে যুদ্ধের শক্তি ও বেগ; প্রধান দুর্বলতা তার সংগঠিত রূপ। যুদ্ধটা সংগঠিত, পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়নি। চলেওনি। বিপরীতে পাকিস্তানিরা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সুসজ্জিত। তাদের ছিল বিদেশি শক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন মিত্র বলতে বাঙালির প্রায় কেউই ছিল না। ভারত যে যুক্ত হয়েছে তা আগের কোনো যোগাযোগের কারণে নয়, ঘটনা পরম্পরায়। একে সে প্রতিবেশী, তার ওপর ছিল শরণার্থীর বোঝা।

এমনকি যারা ছিল নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগও এ কথা বলেনি যে যুদ্ধ তারা শুরু করেছে। বলেছে যুদ্ধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ যে ঐক্যবদ্ধ ছিল তাও নয়। সেখানে যেমন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, তেমনি ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। তাজউদ্দীন আপসে বিশ্বাসী ছিলেন না, খন্দকার মোশতাক সব সময়ই আপসের পথ খুঁজছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীনের আশপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও সবাই যে তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তা নয়। বিরোধ ছিল, যে জন্য মুক্তিবাহিনীর সমান্তরালে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল। খন্দকার মোশতাকরা যে শক্তিহীন ছিলেন না তা বোঝা গেছে ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডে।

স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের শত্রু কে ছিল? শত্রু ছিল তারাই, যারা জাতীয় মুক্তির বিপক্ষে ছিল। অর্থাৎ আলবদর, রাজাকারসহ সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের সমর্থকরা। দক্ষিণপন্থীরা। শত্রু ছিল তারা, যারা মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে মনে করেছে এবং নতুন রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগোতে না দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে, বড় পাকিস্তান ভেঙে ছোট পাকিস্তান গড়বে ভেবেছে। ১৯৭৮ সালের সাংবিধানিক সংশোধনগুলো দক্ষিণপন্থীদেরই কাজ। এরশাদের সময় পুঁজিবাদের পথ আরো প্রশস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রবর্তন পশ্চাৎ গমনেচ্ছুদের আরেকটি বিজয় চিহ্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান সরকারের শাসনামলে ওই সব ফরমানকে সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু শেখ মুজিব এই দক্ষিণপন্থীদের প্রধান শত্রু মনে করেননি। বামপন্থীরা তাঁর মিত্র ছিল না এটা ঠিক, কিন্তু তারা তাঁর জন্য তত বড় শত্রুও ছিল না, যত বড় শত্রু ছিল তাঁর আশপাশে লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা।

সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী উত্থাপন করে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিব যে বক্তৃতা দেন সেটি মুক্তিকামী জনগণের কণ্ঠস্বর নয়, সেটি একজন পথ হারানো জননায়কের স্বগতোক্তি। অত্যন্ত উঁচু একটি জায়গায় ছিলেন তিনি, অতটা জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতা কখনো কোনো বাঙালি রাষ্ট্রনায়ক লাভ করেননি। কিন্তু তিনি এগোনোর পথ দেখতে পাচ্ছিলেন না। তার প্রধান কারণ, জনগণ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ঘাতকরা ওই বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়েছে। নইলে অতি নিষ্ঠুর পাকিস্তানি শাসকরা যে কাজ করতে সাহস পায়নি, সে কাজ করার মতো দুঃসাহস স্থানীয় দুর্বৃত্তরা সংগ্রহ করতে পারত না।

যখন সুযোগ পেয়েছে তখন জনগণ তার শক্তির পরীক্ষা দিয়েছে। ভোট দিয়েছে ১৯৭০ সালে, যেমন দিয়েছে ১৯৪৬ সালে। পাকিস্তানিরা যে তাদের রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না সেটা তাদের অজান্তেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল ১৯৪৮ সালে। যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাঙালির দাবি তিনি মানেন না, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সেটি পুনর্নির্ধারিত হলো সত্তরের নির্বাচনের আগে। যখন বাঙালিদের দাবির মুখে পাকিস্তানিরা এক মানুষ-এক ভোট নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। এর আগে ছিল সংখ্যাসাম্য; অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের ৫৬ জনকে কেটেছেঁটে সমান করে দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ জনের। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়েই করানো হয়েছিল ওই কাজ, নইলে পাকিস্তানিরা নিজেরা পারত না। সংখ্যাসাম্য ভেঙে পড়ল যখন, তখন জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে পূর্ববঙ্গকে দিতে হলো ১৬৯টি, পশ্চিম পাকিস্তান পেল ১৪৪টি। আশা করেছিল ভোটের সময় বাঙালিকে বিভক্ত করা যাবে। যখন দেখল পারল না, তখন ঝাঁপিয়ে পড়ল গণহত্যায়।

জনগণ সংগ্রাম করেছে কিন্তু মুক্তি পায়নি। রাষ্ট্র এখন কতটা স্বাধীন তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যায়। কিন্তু জাতি যে মুক্ত নয়, সেটা সন্দেহাতীত। জাতি বলতে জনগণকেই বোঝায়। সেই জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতার ধারেকাছেও নেই। দেশে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি মানে বড়জোর ২০ জনের উন্নতি ও ৮০ জনের অবনতি। ধনী-দরিদ্রের তারতম্য বোঝাতে আকাশ-পাতালের উপমা অগ্রাহ্য নয়। ওই দুই প্রান্তের মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের বিন্যাস। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম চলছে। সরবে নয় নীরবে। তাকে চলতেই হবে, না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী, দাঁড়ানোর জায়গা কোথায়?

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0086619853973389