দুই দফা সুযোগ দেওয়ার পর এখনো এমপিওভুক্তির বাইরে রয়ে গেছেন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। তবে সবচেয়ে বেশি এমপিও পেয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অধীনস্থ স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এমপিও পেয়েছেন মাদরাসার শিক্ষকরা। তবে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর গত ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির ঘোষণা দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৯ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক হাজার ৬৩৩ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ ৯৮২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করে। এই দুই হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর আবেদনের সুযোগ পান। তবে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তি পেয়েছেন। ফলে এখনো প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর বাইরে রয়ে গেছেন।
মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া এক হাজার ৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। এর মধ্যে গত ১৬ মে প্রথম দফায় বিশেষ এমপিও দেওয়া হয়। সেখানে এমপিও পান তিন হাজার ৬২৬ জন। আর দ্বিতীয় দফায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিশেষ এমপিও পান পাঁচ হাজার ৩৭৫ জন। ফলে দুই দফায় স্কুল-কলেজের ৯ হাজার একজন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও পেলেন।
এ ছাড়া মাদরাসা ও কারিগরির ৯৮২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথম দফায় গত ১৬ মে মাদরাসা থেকে এমপিও পেয়েছেন এক হাজার ৩৭৪ জন। আর গত বুধবার দ্বিতীয় দফায় মাদরাসার দুই হাজার ৫৪৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও পেয়েছেন। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা এখন পর্যন্ত মাত্র একবার বিশেষ এমপিও দিতে পেরেছে। প্রথম দফায় গত ১৬ মে মাত্র ১২১ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
জানা যায়, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। বিশেষ করে, নতুন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য অধিদপ্তর থেকে প্রায় ৪০ ধরনের কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এসব কাগজ সব শিক্ষক জোগাড় করতে পারছেন না। আবার কোনো কোনো শিক্ষক কাগজপত্র জমা দিলেও নানা ভুলভ্রান্তি রয়েছে। কারো কারো কাগজে অস্পষ্টতা রয়েছে। অনেক শিক্ষক-কর্মচারীই নতুন করে বানানো কাগজপত্র জমা দিয়েছেন বলে এমপিও পাচ্ছেন না। চলতি অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছিল। এসব শিক্ষক-কর্মচারী গত বছরের ১ জুলাই থেকে বেতন-ভাতা পাবেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে। যেহেতু আর কয়েক দিন পরেই চলতি অর্থবছর শেষ হচ্ছে। এই অর্থবছরে আর কোনো এমপিওভুক্তির সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। তাই আগামী অর্থবছরে গিয়ে বাদ পড়া শিক্ষক-কর্মচারীরা পেছনের বেতন-ভাতা পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য দুই দফায় সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিছু শিক্ষকের আবেদন ভুলত্রুটির কারণে বাদ পড়েছে। তবে অনেক শিক্ষকই এখন পর্যন্ত আবেদনই করেননি। এখনো এমপিও না পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপারে আমরা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস থেকে তথ্য নেব। এরপর তাঁদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হয়তো তাঁরা আরো একবার সুযোগ পাবেন।’