এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময় আসেনি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময় আসেনি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিজ্ঞান প্রকৃতিকে জয় করেছে, মানুষের নিয়ন্ত্রণে সব কিছু এ রকম একটা গর্ব মানুষ করেছিল। অবশ্য অতীতের মহামারি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে এবারের বিশ্বব্যাপী করোনার গ্রাস সব অহঙ্কারকে চ‚র্ণ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ যে বিশ্বায়নের ফলে অর্থনৈতিক সংকট একযোগে সর্বত্র তীব্র হয়েছে। উড়োজাহাজ উড়েনি, জাহাজ চলেনি, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। নগরজীবনের বড় একটা চাকচিক্যও ভোগছিল রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো এবং পর্যটন কেন্দ্রে। সব বন্ধ। লকডাউন অর্থাৎ গৃহে বন্দি। এই লকডাউন যেখানে যতবেশি সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে, সেখানে মহামারির তীব্রতা বেশ কিছুটা কম অনুভ‚ত হয়েছে। মহামারি অতীতে বহুবার হয়েছে, যেমন প্লেগ, কলেরা, যক্ষা, ম্যালেরিয়া। আমাদের নবী করিম (স.) অবশ্য এই লকডাউনের পথ বলে দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, মহামারি এলাকা থেকে কেউ বাইরে আসবেন না এবং বাইরে থেকে কেউ সেখানে যাবেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এই প্রত্যাশায় করোনা মহামারি শুরুর প্রারম্ভে অনেক রাজনৈতিক নেতা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো বললেন এটা একপক্ষের ব্যাপার। করোনা যখন বিশ্বকে গ্রাস করতে চলেছে তখন তো বিশ্বের দুই বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঞ্চে নৃত্য করেছেন, আর সেই সঙ্গে দিল্লি পুলিশ মুসলিম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুটি দেশ অবশ্য চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে করোনায় প্রায় ১ বছর হয়ে এলো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত জ্ঞান কোনো কাজে আসেনি। এখন কোনো টেকসই চিকিৎসা চালু হয়নি। ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে হাজারো কথা, আর সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। আর এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণের পাগলা মেহের আলীর মতো চিৎকার করে চলেছে, এফাৎ যাও, সব কুছ ঝুট হ্যায়।

বাংলাদেশে করোনার আক্রমণ ততটা ভয়াবহ হয়নি, যেমনটি উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশে হয়েছে। এখন ভারতে তো সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার প্রায়ই বিশ্ব রেকর্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবশ্য প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত এবং উদ্বিগ্ন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যেন এই দুর্যোগের উপশম হয়। বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ কম এর কৃতিত্ব মনুষ্যের নয়, আল্লাহতায়ালার রহমত রয়েছে আমাদের ওপর। বরঞ্চ করোনার সূচনালগ্নে একদল অসাধু ব্যবসায়ী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা চরম দুর্নীতি ঘটাল। এহেন বিপদের মধ্যে তারা নকল মাস্ক সরবরাহ করল। অক্সিজেন সিলেন্ডার এবং আরো আনুষঙ্গিক কিছু দ্রব্য নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করল। এর চেয়ে লজ্জা এবং ঘৃণার কী থাকতে পারে। এই কালো দিনগুলোর ভেতর আমরা গর্ব করতে পারি যে বেশকিছু সম্মুখযোদ্ধা যথা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এগিয়ে আসেন এবং আমাকে প্রাণ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালার তাদের জান্নাতবাসী করুন (আমিন)। করোনার ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে চরম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। সরকার পক্ষ থেকে বেশকিছু অনুদান এবং প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে দেড় যুগের বেশি ধরে যে পরিমাণ কোটিপতির সৃষ্টি হয়, বেসরকারিভাবে সেই পরিমাণ সাড়া আসেনি।

এই উপমহাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা খুব ধনী। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান দেশের বাইরে, সন্তান প্রসবও তাই। এই উপমহাদেশের ক্রিকেট পাগল ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে পকেটের খবর রাখেন না। পেশাজীবীদের ভেতর কিছুসংখ্যক ক্রিকেট খেলোয়াড় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। এই চরম সংকটের ভেতর প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য আনার জন্য অপূর্ব এক ফর্মুলা দিলেন। তিনি বললেন যে, জীবন এবং জীবিকা দুটির কথাই ভাবতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কর্মকাণ্ড শুরু করতে হবে। বেশ দ্রæতই বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলো। আর সেই সঙ্গে করোনা আতঙ্ক বহুলাংশে কমে আসে। রেলপথ, বিমান সড়ক এবং নৌপথ সবই চলছে, পোশাক শিল্প অবশ্য প্রায় প্রথম থেকে চালিয়ে আসছে, এখন একটা কথা এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপার নিয়ে। এ কথা ঠিক যে, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রদের কিছুটা মানসিক বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে যতটা সম্ভব অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। শহর এবং গ্রামের ভেতর বেশ খানিকটা বৈষম চলছে। এত কিছুর পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিবেশ এখনো হয়নি। উন্নত বিশ্বেও বহু দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্কের করোনা পরিস্থিতি খুবই ভালো। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার শতকরা এক ভাগ। তারপরও সেখানকার শিশুদের স্কুলে আনতে নারাজ। নানা রকম চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা যে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এদিকে বিশ্ব পরিস্থিতি কিছুটা স্তিমিত হলেও আবার করোনা পরিস্থিতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে। ইউরোপে সংক্রমণ হার আবার বাড়ছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে। বাংলাদেশে আল্লাহর কৃপায় মৃত্যুর হার খুব কম। কিন্তু সংক্রমণ হার এখনো শতকরা ১০ ভাগের ঊর্ধ্বে।

আন্তর্জাতিক বিবেচনায় এটিকে বিপজ্জনক বলে গণ্য করা হয়। গোটা বিশ্বেই শীতকালে করোনার প্রকোপ বাড়বে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়কমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে শীতকালে করোনার দ্বিতীয় আতঙ্ক দেখা যাবে। শীতের তো বিলম্ব নেই। নভেম্বরে শীতকাল শুরু হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাজারো স্বাস্থ্যবিধি আবিষ্কার করে নির্দেশনা জারি করে চলেছে। বাস্তবে কী পরিমাণ পালিত হচ্ছে তা আমরা নিয়তই দেখছি। আর শিশুরা কতটা মেনে চলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষকদের কতজন মনোনিবেশ করবেন, তাও আমরা দেখে আসছি। ঢাকায় এক প্রখ্যাত বিদ্যালয়ে আমার নাতি পড়ত। কয়েক বছর আগের কথা, আমার নাতিটি প্রচণ্ড সর্দি, কাশি ও জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার কাশিতে পরীক্ষার হলে একটু সমস্যা হচ্ছিল। একজন শিক্ষয়িত্রী পিয়নের দ্বারা তাকে একটা মালী রুমে পাঠিয়ে দেন। পরীক্ষা শেষ হলে তাকে আনতে গিয়ে দেখি সে টেবিলে মাথা রেখে শূন্য একটা কক্ষে বসে রয়েছে। সে যে বিদ্যালয়টিতে পড়ত, সেটাতে ভর্তি হওয়া গর্বের ব্যাপার। তা সত্ত্বেও সেখান থেকে টিসি নিয়ে কম খ্যাত বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেই।

আমাদের শীতকালের পরিস্থিতি লক্ষ করতে হবে। তার আগে শিশুদের উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে আনার চিন্তা করা যাবে না। আর ইতোমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার কতটা উন্নতি করে তাও বোঝা যাবে। অনলাইনে শিক্ষায় ব্যাপ্তি ঘটানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। তাদের প্রতি আহ্বান জানানো যেতে পারে। চোর, ডাক্তার, ঘুষখোর এদের ধরে ভিআইপি কভারেজ দেয়ার কোনো কারণ নেই, বরঞ্চ মাননীয় হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে বলা হয়েছে এ ধরনের কার্যকলাপে এবং টকশোতে বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে। টিভিতে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান যত দেখানো যায়, ততই দেশের মঙ্গল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভেতর সমন্বয় ঘটিয়ে অনলাইন শিক্ষার প্রসার কতটা ঘটানো যেতে পারে, সে ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তড়িঘড়ি করে শিশুদের উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে আনা কোনো অবস্থাতে ঠিক হবে না। আর এ ব্যাপার কোভিড প্রতিরোধ কমিটি এবং আরো কিছু বিশেষজ্ঞের মতামত অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045080184936523