এটুআই কর্মকর্তার জন্য ফেরি আটকা, ছাত্রের মৃত্যুতে তীব্র ক্ষোভ - Dainikshiksha

এটুআই কর্মকর্তার জন্য ফেরি আটকা, ছাত্রের মৃত্যুতে তীব্র ক্ষোভ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এটুআই প্রকল্পে কর্মরত একজন যুগ্মসচিবের আসাকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে দীর্ঘসময় ফেরি আটকে রাখার কারণে মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।বৃহস্পতিবার মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় নড়াইলের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেদিন রাতেই একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকার দিকে রওয়ানা দেন তিতাসের অভিভাবকরা। সোমবার (২৯ জুলাই) বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নাগিব বাহার।

কিন্তু একজন ভিআইপি আসবেন বলে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘন্টা ফেরি পারাপার করতে দেয়নি। দুই ঘন্টার বেশি সময় ফেরি আটকে রাখার পর ভিআইপি পৌঁছালে ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সটি যেতে দেয়া হয়।

অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরিটি যাত্রা শুরু করার পর মাঝপথেই মারা যায় তিতাস ঘোষ।

নির্ধারিত সময়ে ফেরি না ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

কী হয়েছিল ফেরিঘাটে?
তিতাস ঘোষের মামা রাজীব ঘোষ, তিতাসের মা, বোন সেদিন ঐ অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন। তারা বহুবার অনুরোধ করলেও সেসময় ঘাটে উপস্থিত নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বরত কমকর্তা বা পুলিশ সদস্যরা ভিআইপি ফেরি চলাচল শুরু করতে রাজি হননি।

রাজীব ঘোষ বলেন, "আমরা সাড়ে আটটার কিছু আগে কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে পৌছানোর প্রায় আধঘন্টা পর যখন দেখি যে ফেরি চলাচল হচ্ছে না, তখন সেখানে উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারি যে ভিআইপি আসবে বলে ফেরি ছাড়া হচ্ছে না।" শুরুতে তারা সেখানে উপস্থিত কর্মচারীদের অনুরোধ করেন, তারা ফেরি ছাড়তে অপারগতা প্রকাশ করলে ঘাটের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে এবিষয়ে কথা বলেন।

এর মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে এ বিষয়ে জানালেও কোনো ধরনের সাহায্য পায়নি বলে জানান তারা।

শুরুতে সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের কথা 'গ্রাহ্যই করেনি' বলে অভিযোগ করেন রাজীব ঘোষ।

"মুমূর্ষু রোগী আছে বলে ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের কাছে আমরা অনুরোধ করি ফেরি ছাড়তে, কিন্তু তারা আমাদের কথা গ্রাহ্যই করেনি।"

একপর্যায়ে তিতাসের মা এবং বোন পুলিশ সদস্যদের পায়ে ধরে অনুনয় করলেও কোনো কাজ হয়নি বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

এরপর সাড়ে দশটার দিকে একজন পুলিশ সদস্য এবং ঘাটের দায়িত্বে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্স সহ অন্যান্য গাড়ি উঠানোর অনুমতি দেন।

যেই ভিআইপি'র গাড়িটির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল, সেটিও সেসময় ফেরিতে ওঠে।

রাজীব ঘোষ জানান, ফেরি চলা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিতাস মারা যায়।

কী বলছেন ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা?

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দাবি, যে মুহুর্তে তারা জানতে পারেন যে ফেরির অপেক্ষায় মুমূর্ষু রোগী রয়েছেন, তখনই তারা ফেরি চলাচল শুরু করতে তাগাদা দেন।

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন - যিনি বৃহস্পতিবার রাতে ঘাটে উপস্থিত ছিলেন না - জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তিনি ঘাটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ফিরোজ আলমের কাছ থেকে জানতে পারেন যে অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী ফেরির অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি তখনই ভিআইপি'র সাথে যোগাযোগ করে ফেরিতে গাড়ি উঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান।

সালাম হোসেন বলেন, "রাত ১০টার পর উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম, যিনি আমার অনুপস্থিতিতে ঘাটের দায়িত্বে ছিলেন, আমাকে ফোন করে জানায় যে অ্যাম্বুলেন্স ফেরির অপেক্ষায় আছে। আমি তখনই ভিআইপি'কে ফোন করে তার অবস্থান জেনে নিয়ে ফেরিতে গাড়ি ওঠানোর নির্দেশ দেই।"

এর আগে সকালে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক  সালাম হোসেনকে একজন ভিআইপি'কে ফেরি পারাপারের বিষয়ে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেন।


উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলমও দাবি করেন, রাত সাড়ে দশটার দিকে তিনি প্রথম জানতে পারেন যে ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী রয়েছে।

"আমি যখনই জানতে পারি যে রোগী অপেক্ষা করছে ফেরির জন্য, তখনই ব্যবস্থাপক সালাম হোসেনকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে ফোন করে বলেন ফেরিতে গাড়ি ওঠাতে।"

একইরকম বক্তব্য দেন ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ট্রাফিক সাব ইন্সপেক্টর গাজী নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম বলেন, "রাত দশটা থেকে আমার ডিউটি শুরু হয়। সোয়া দশটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা মুমূর্ষু রোগীর দুই আত্মীয় আমাকে ঘটনা বলার সাথে সাথেই আমি দায়িত্বে থাকা ফিরোজ আলমকে এবিষয়ে অবহিত করি। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরিতে গাড়ি ওঠানো হয় এবং ফেরি ছেড়ে দেয়।"

তবে তিনি ডিউটিতে আসার আগে পুলিশের কাছে এই ঘটনা জানানো হয়েছিল কিনা, সেবিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলামের আগে ঘাটের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার ফোন বন্ধ থাকায় এবিষয়ে তার সাথে কথা বলা যায়নি।

আর ঘাটের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাছে ভিআইপি চলাচলের কোনো বার্তা ছিল না বলেও নিশ্চিত করেন নজরুল ইসলাম।

সামাজিক মাধ্যমে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে?


ভিআইপি চলাচলের কারণে ফেরি ছাড়তে দেরি হওয়ায় স্কুলছাত্র তিতাসের মৃত্যুর খবরে ক্ষুদ্ধ্ব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

ফেসবুক পাতায় মানুষের এই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হলে অনেকেই নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে পোস্ট করেন।

ভিআইপি চলাচলের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে বা চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে দেরিতে পৌঁছেছেন - এমন অভিযোগ করেন অনেকেই।

মুমূর্ষু রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় ভিআইপি চলাচলের কারণে হওয়া ভোগান্তির কথাও উঠে আসে অনেকের পোস্টে।

তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষের করের টাকায় বেতন পাওয়া সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের ভিআইপি মনে করার বিষয়টি নিয়ে - যে প্রবণতা বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এর আগেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034010410308838