বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খুলতে দিতে হয় প্রায় ১০০ ধরনের তথ্য, যার মধ্যে বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয়। বেশ কিছু আবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পূরণ করার নিয়ম। কিন্তু তা চাপিয়ে দেয়া হয় গ্রাহকের ওপর। আগামী মাস থেকে সব বাদ দিয়ে শুধু ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরম হবে দুই পাতার। কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পূরণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে যে কোনো বাংলাদেশি ব্যাংকের হিসাব খুলতে পারবেন। এমনকি লাগবে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একজন হিসাবধারীর পরিচয় প্রদান প্রত্যয়নও।
ব্যাংকের ব্যবহৃত ফরমগুলো সহজীকরণের জন্য গঠিত কমিটির বৈঠকে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রহুল আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বৈঠকের বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব রুহুল আজাদ বলেন, ‘বৈঠকে ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরম সহজ করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যাংক হিসাব খোলার ফরম হবে দুই পাতার। গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নির্দেশনায় আমরা এ কাজটি করেছি।’ তিনি আরো বলেন, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আরেকটি বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হবে। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই দুই পাতার ফরম পূরণ করে গ্রাহকরা ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন।
বর্তমানে কোনো ব্যাংকে হিসাব খুলতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি ও এনআইডি লাগে। পাশাপাশি ব্যক্তির চাকরি বা ব্যবসাসংক্রান্ত পরিচয়পত্র, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, টেলিফোন বিলের কপি এবং একজন পরিচয় প্রদানকারীর প্রত্যয়ন দিতে হয়। কিন্তু আগামী মাস থেকে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে শুধু ছবি ও এনআইডি ছাড়া আর কিছু লাগবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরম হবে দুই পাতার। এর মধ্যে চাওয়া হবে না কোনো বাহুল্য তথ্য। ফরমগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীও খুব সহজে এটি পূরণ করতে পারে। বর্তমানে অনেক ব্যাংকে মাসে হিসাবধারী কত টাকা জমা বা উত্তোলন করবেন, তাঁর কী কী ব্যবসা আছে বা অন্য কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে কি না, এসব তথ্যও দিতে হয়। এগুলোর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করে সরকার গঠিত কমিটি। আগামী দিনে এসবের কিছুই হিসাব খুলতে প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া বর্তমানে ব্যাংকঋণ নিতে হলে ১৩ পাতার ফরম পূরণ করতে হয়। আগামী দিনে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ফরম হবে ৫ পাতার।
গত ২২ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে বার্ষিক উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নবিষয়ক পর্যালোচনা সভায় ব্যাংকে ব্যবহৃত ফরমগুলো সহজীকরণের উপায় নির্ধারণ করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বলা হয়েছিল। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর এ সম্পর্কিত একটি কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল ছিল কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক।