করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেও তা খেলাপি হিসাবে গণ্য হবে না।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার ও ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এমআরএ) গত রবিবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে ঋণের কিস্তি পরিশোধে এই সাময়িক দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সারাদশ থেকে শিক্ষকরা জানিয়েছেন তাদের লোনের কিস্তির কথা। করোনার এই মহামারীর সময় তারা লোনের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে পরিবর্তন আনা যাবে না। অর্থাৎ এ সময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান খেলাপি হবে না। সার্কুলারে বলা হয়, করোনাভাইরাস বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারির আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবের কারণে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক ক্ষতি ও ঋণের অর্থ পরিশোধের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের একই ছাড় দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমআরএর প্রজ্ঞাপনে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমআরএ থেকে সনদ পাওয়া সব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণের কিস্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের ফলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এমআরএর পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণ তার চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণি করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণি করা যাবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫৮টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এমআরএ থেকে সনদ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা। এ খাতে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা তিন কোটি ১০ লাখ। এনজিওগুলোর ঋণ স্থিতির পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
এমআরএর কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত শিথিল বলতে কেউ কিস্তি পরিশোধ করবে না, তা নয়। কেউ কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাকে খেলাপি গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।