এনটিআরসিএ'র কাছে বিনীত নিবেদন - দৈনিকশিক্ষা

এনটিআরসিএ'র কাছে বিনীত নিবেদন

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

বেসরকারি স্কুল , কলেজ ও মাদরাসায় এখন শিক্ষক সংকট চরমে । এমনিতেই দেশে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব । আমাদের শিক্ষার মান সে কথাই বলে দেয় । ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে শিক্ষকের আকাল । তদুপরি গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিক নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় সাধারণ রুটিনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা ও দুরুহ হয়ে পড়েছে । সারা দেশে এমন কোনো স্কুল, কলেজ কিংবা মাদরাসা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কোনো না কোনো শিক্ষকের পদ খালি নেই ।

বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পার্ট টাইম শিক্ষক দিয়ে চলে । অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা পার্ট টাইম শিক্ষকের বেতন দিতে গিয়ে একদম ফানা ফতুর । আবার অনেকে তাদের নিয়মিত বেতন দিতে পারে না । পার্ট টাইম শিক্ষকের কাছে ফুল টাইম সেবা আশা করা দুরাশা মাত্র । তাদের অনেকের যেমন কাম্য যোগ্যতা নেই , তেমনি নেই কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা অভিজ্ঞতা ।

 এরা সময় সুযোগে অন্যত্র চলে যায় । ফলে শিক্ষার্থীরা ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হয় । গত ২৬ আগস্ট এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে শুন্য পদের চাহিদা চেয়েছে । আমার জানা মতে এটি তাদের দ্বিতীয় চাওয়া । ই-রিকুইজিশন পাঠাবার সময়সীমা ১৩ সেপ্টেম্বর । এখন তা আরো কয়দিন বাড়িয়ে দিয়েছে । তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এ সময়ে ই-রিকুইজিশন দেবার জন্যে পনের-বিশদিন সময়ই তো অনেক বেশি । আরো দশ দিন বাড়িয়ে অযথা সময় ক্ষেপনের কী মানে হতে পারে জানিনা ? এমনিতে একদিনে এক বছর যায় । একেকটা প্রতিষ্ঠানে হাজার-বারশ' শিক্ষার্থীর জন্যে  সাত-আট জন মাত্র শিক্ষক । এতগুলো শিক্ষার্থীদের এরা কী করে পড়াতে পারেন ? সারাদিন শ্রেণিতে কেবল হৈচৈ । একেকটা শ্রেণিতে দেড়-দুইশ' শিক্ষার্থী । বহুদিন থেকে নতুন শ্রেণি শাখা খোলার সুযোগ ও একান্ত সীমিত করে রাখা হয়েছে । কোনোদিন 'এমপিও দাবি না করার শর্তে' কেবল শাখা খোলার অনুমতি মেলে ।

তাও আবার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এর পর । এক সময় জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নতুন শ্রেণি শাখা খোলার অনুমতি পাওয়া যেতো । এরপর শিক্ষাবোর্ড । বর্তমানে এর জন্যে মন্ত্রণালয়ে যেতে হয় ।

 নতুন শ্রেণি শাখা খোলার আগ্রহই এখন আর অনেকের নেই । শাখা শিক্ষক নিজের খেয়ে কিংবা উপোস থেকে পাঠদান করবেন সে আমাদের ভাবনায় আসে কী করে ?মনে হয় দেড়-দুই বছর আগে একবার এনটিআরসিএ ই-রিকুইজিশন চেয়েছিল । জানিনা সে সময় তারা ক'জন নিয়োগ দেতে পেরেছে ? আমার চেনা জানা কোনো প্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগ দিয়েছে বলে শুনিনি। নিশ্চয় তখন সারা দেশে খুব বেশি লোককে নিয়োগ দিতে পারেনি । অনেককে একাধিক বা ততোধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ দিয়ে এনটিআরসিএ  কেবল নিজে হাসির পাত্রে পরিণত হয়নি উল্টো  নিয়োগ নিতে গিয়ে অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। কোনো কোনো জায়গায় কমিটি এ জাতীয় শিক্ষকদের নিয়োগ দিতেই চায়নি । ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গভার্ণিং বডির উপর এনটিআরসিএ'র কোনো হাত নেই ।

তারা এনটিআরসিএর সুপারিশকে আমলে নিতে চায়নি । নিয়োগ তাদের হাত থেকে নিয়ে নেয়ায় এমনিতেই তাদের গা জ্বালা । সে অভিজ্ঞতায় আমাদের আর যেন ফিরে যেতে না হয় ।এনটিআরসিএ অনেকগুলো নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়েছে । যারা নিবন্ধিত হয়েছেন তারা সবাই নিঃসন্দেহে শিক্ষকতার প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করেছেন । এসব ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি নিয়োগ দেয়া যাবে ততই দেশ ও জাতির কল্যাণ । জাতি গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার মানসিকতা নিয়ে তারা কেউ কেউ অনেক বছর ধরে পথ চেয়ে বসে আছেন । এখন তারা নিজেকে দেশ , জাতি ও পরিবারের বোঝা মনে করেন ।

তাদের সে দুর্ভাবনার অবিলম্বে অবসান হওয়া চাই । জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮-তে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে যে সব নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে সে সব সৃজিত পদে রিকুইজিশন না দিতে বলা হয়েছে । বিষয়টি অনেককে হতাশ করেছে । অন্যদিকে উক্ত নীতিমালায় শিক্ষকতায় প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে । মনে হয় এবারের নিয়োগে বয়সের বিষয়টি পুরোপুরি কার্যকর হবে । যদি তাই হয় তবে নিবন্ধিত অর্ধেকের বেশি শিক্ষক প্রার্থী এ কারণে অযোগ্য বিবেচিত হবেন । তারা নিয়োগ লাভে বঞ্চিত হবেন । আমার তো মনে হয় এ পর্যন্ত যতজন নিবন্ধন পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন তাদের অর্ধেকের ও বেশির বয়স ৩৫ বছর পেরিয়ে গেছে ।

এতো কাঠখড় পুড়িয়ে কেবল বয়সের কারণে যদি শিক্ষকতা পেশায় তারা আসতে না পারেন তবে সেটি তাদের চেয়ে দেশ ও জাতির জন্যে বেশি ক্ষতির কারণ হবে । কোনো কিছুতে 'এটি মানি' আর 'সেটি মানি না' সে অন্য অনেকের মতো আমার ও পছন্দ নয়।পুর্বে শুন্য হওয়া পদ ও বিষয় নীতিমালার আলোকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন পদ ও বিষয় হিসেব গণ্য হবে । সাম্প্রতিক ই-রিকুইজিশনের নির্দেশনায় তাই বলা হয়েছে । জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার কিছুটা প্রযোজ্য হবে আর কিছুটা প্রযোজ্য হবে না- সে কী করে মেনে নেয়া যায় ?এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে জোড় হাতে মিনতি করে একটি কথা বলি । মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগুলোর মরি মরি অবস্থা । আর কাল ক্ষেপনের অবকাশ নেই ।

শিক্ষার দুর্দিন কাটিয়ে উঠার জন্যে দয়া করে অবিলম্বে সব শুন্য পদে শিক্ষক  নিয়োগের সুপারিশ দিয়ে দিন। একজনকে এক জায়গায়ই নিয়োগের মতামত দিয়ে প্রেরণ করুন । ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গর্ভণিং বডি কথা না শুনলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলে এদের বাতিল করার ব্যবস্থা নিন । বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় প্রাণের সঞ্চার করুণ । গোটা জাতি আপনাদের হাতের দিকে চেয়ে আছে । দ্রুত জাতির প্রত্যাশা পুরণ করে  কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ হউন । 

লেখক:  অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ , কানাইঘাট , সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।  

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032589435577393