বিজ্ঞান একটি সৃজনশীল বিষয়। যা শুধুমাত্র পড়ে শোনানো, মুখে মুখে ব্যাখ্যা, বক্তৃতা, তথ্য মুখস্ত করানো ও লেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। হাতে-কলমে এবং বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে (পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণভিত্তিক) বিজ্ঞান শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার বিকাশ ঘটে। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-তে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল, যুক্তিবাদী, অনুসন্ধিৎসু ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
সারা বিশ্বে মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ- দ্বাদশ শ্রেণি) শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। আজকের যুগে কেউ এটিকে উপেক্ষা করতে পারবে না। এমনকি যারা উচ্চতর পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয় পড়বে না তাদের জন্যও বিজ্ঞানের মৌলিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোনো সাধারণ শিক্ষা বিজ্ঞান বিষয় ছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা বলে বিবেচিত হতে পারে না। একটা সময় ছিল যখন শুধু বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরাই বিজ্ঞান বিষয়টি পাঠ্যবই হিসেবে পড়ত। কিন্তু বর্তমানে বেশ কয়েকবছর ধরে নবম-দশম শ্রেণির সকল শাখার শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে বিজ্ঞানকে পাঠ্যবিষয় হিসেবে পাচ্ছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়টি শ্রেণিতে পড়াতে গিয়ে একজন শিক্ষককে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাও কম সমস্যায় পড়ে না। এই বইয়ের বেশ কিছু পাঠ প্রয়োজনীয় নয় বলে মনে করি। আবার কোনো কোনো অধ্যায়ের ধারাবাহিকতা বজায় নেই। তাই বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আমরা আগ্রহী করে তুলতে পারছি না। প্রসঙ্গত, বলা যায়—
দ্বিতীয় অধ্যায়—জীবজগৎ-এর স্থলে তৃতীয় অধ্যায়—উদ্ভিদ ও প্রাণির কোষীয় সংগঠন প্রতিস্থাপন করা উচিত। কারণ শ্রেণিকক্ষে জীবের গঠন পড়ানোর সময় এককোষী, বহুকোষী, নিউক্লিয়াস ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা নানারকম প্রশ্ন করে। এই প্রশ্নের উত্তরগুলো কোষ চ্যাপ্টারটি পড়ার সময় তারা জানতে পারে। তাই দ্বিতীয় অধ্যায়ে কোষ চ্যাপ্টারটি দিলে শিক্ষার্থীরা কোষ, নিউক্লিয়াস ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে পরবর্তী সময়ে জীবের গঠন অর্থাৎ জীবজগৎ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করবে। এতে শিক্ষার্থীর জানার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তাছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্ররা প্রাথমিক স্তরে জীবকোষ সম্পর্কে কোনো ধারণা পায়নি, তাই প্রথমে জীবকোষ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলে শিক্ষার্থীর জানার বিষয়টি আরো দীর্ঘস্থায়ী ও সুস্পষ্ট হবে।
অষ্টম অধ্যায়—মিশ্রণ-এর পাঠ ০১-০৯ এই শ্রেণির জন্য পাঠ উপযোগী। কিন্তু পাঠ ১০-১২ অংশটুকু খুব একটা উপযোগী বলে মনে হয় না। কারণ লবণের স্ফটিক তৈরি ও লবণাক্ত পানি থেকে বিশুদ্ধ পানি প্রস্তুতকরণ প্রণালিটি করার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে আছে কিনা তা দেখবার বিষয়। তাছাড়া বিভিন্ন বিক্রিয়া ও পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া করার আগে পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রাথমিক ধারণার একটি চ্যাপ্টার সংযোজন করা হলে শিক্ষার্থীরা ওপরের শ্রেণিতে সহজেই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে পারবে।
একাদশ অধ্যায়—বল ও সরলযন্ত্র-এর পাঠ ৮-৯; হেলানো তল, কপিকল এবং পাঠ ১০-১১; চাকা—অক্ষদণ্ড অংশটুকু ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য খুব একটা প্রয়োজন নেই। কারণ বিজ্ঞান যেহেতু হাতে-কলমে শিক্ষা তাই যন্ত্রগুলো দেখাতে হলে বা হাতে স্পর্শ করাতে হলে এগুলো শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করা কঠিন। যন্ত্রগুলো চাক্ষুষ দেখানো ছাড়া কোনোভাবেই বর্ণনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা সম্ভব নয়।
পাঠ্যপুস্তক যেহেতু সব মেধার শিক্ষার্থীর জন্য একই মানের হয় তাই এটা সহজ, বোধগম্য ও সুস্পষ্ট হওয়া বেশি প্রয়োজন। মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চতর জ্ঞান থেকে বঞ্চিত না হয় এবং স্বল্প মেধাবী শিক্ষার্থীরাও যেন প্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকু অর্জন করতে পারে, সেই দিকেই আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। তাই উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য পাঠ্যপুস্তক যাঁরা রচনা করেন, যাঁরা বই সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করেন তাঁদের প্রতি বিনীত আবেদন রইল।
সহকারী শিক্ষক, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ