এবারও হলো না বৈশাখী ভাতা - দৈনিকশিক্ষা

এবারও হলো না বৈশাখী ভাতা

সায়র আলমগীর আহমেদ |

এদেশে একটি মাত্র উৎসব, যা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম এক সাথে পালন করে। এমন একটি সর্বজনীন উৎসবে এবারও বৈশাখী ভাতা পেলেন না বেসরকারি শিক্ষকরা। দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন দেয়া হয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারী গত তিন বছর ধরে বৈশাখী ভাতা পেলেও শুধু বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা বাদ পড়ে যাচ্ছেন প্রতিবার। কেন বাদ যাচ্ছেন, তার কোন উত্তর নেই। অথচ আমরা যদি একটু সাদা চোখে সব অবলোকন করি দেখব দেশে সরকারি-বেসকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনায় সিলেবাস একই। প্রায় একইযোগ্যতার (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) শিক্ষক। অফিসে সময়ও এক ( তবে কখনো কখনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি) পাঠদানের সময়ও একইভাবে নির্ধারিত। মূল বেতনও এক। সবই যদি এক- তবে বৈষম্য কোথায়। একবার শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে।

কথাটা শুনতে অনেক বড়, ব্যাপক, বিস্তৃতএবং লাভজনক মনে হয়েছে অনেকের কাছে। তখন সবাই প্রশ্ন করত, এত বাড়িভাড়া দিয়ে বেসরকারি শিক্ষকরা কী করবে? পরে যখন ব্যাখ্যা করে বলা হল- আসলে বাড়ি ভাড়া একশ টাকা তার পাঁচগুণ পাঁচশ টাকা (এভাবে পাঁচগুণ) তখন সবাই কথাটার অসারতা বুঝলেন। যারা জানতে চাননি তারা আজও জানেন না। হয়তো তাদের মনে ভ্রান্তি এখনো রয়ে গেছে।

বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চেয়ে যোগ্যতায় খাটো, এটা অনেকেই মনে করেন। কিন্তু পরিশ্রমটা সমান এটা কি মনে করেন? করেন। কখনো কখনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিশ্রম বেশি এটাও মনে করেন অনেকে। যদি তাই হয় তাহলে পরিশ্রমের মূল্য কি বেসরকারি শিক্ষকরা দাবি করতে পারেন না? ধরে নিই সরকারি
শিক্ষকরা সব কিছুতে স্পেশাল। হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁরা তো সরকারের অন্যান্য কর্মকতার মতো বছর শেষে ৫ শতাংশ
ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। মূল বেতনে বোনাস পাচ্ছেন। ছুটি ছাটা বেশি ভোগ করেন। রিক্রিয়েশন লিভ-বোনাস ভোগ করেন। সব প্রাপ্তিই তাঁদের। এসব প্রাপ্তি তাঁদের বিশেষত্ব দিচ্ছে। এতে বেসরকারি শিক্ষকদের আপত্তি নেই। শুধু দু’একটা জায়গায় বেসরকারি শিক্ষকরা পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্যটা চান। হতে পারে বছর শেষে একটা ইনক্রিমেন্ট- এটা কি
বেশি দাবি তাঁদের পরিশ্রমের তুলনায়? বছরে মাত্র দুটো ঈদ বোনাস এটাকি তাঁদের প্রাপ্য নয়? এখানেও বৈষম্য (২৫ শতাংশ) করা হয়।

আমরা প্রায় বলি উৎসব সবার। কিন্তু উৎসব উদযাপনে আর্থিক বৈষম্য কোন্ সে সমতার কথা বলে! গত তিন বছর ধরে সরকার বৈশাখী ভাতা দিচ্ছেন। বছরে একটিবার এ ভাতা মেলে, সেখানেও বৈষম্য। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে একটি মাত্র উৎসব যা সব শ্রেণি-পেশা- ধর্মের লোক এক কাতারে দাঁড়িয়ে পালন করে। সে একটি মাত্র উৎসব
পালন করার জন্য সরকার একটি বোনাস নির্ধারণ করেছেন সেখানেও বেসরকারি শিক্ষকদের বাদ দেয়া হয়েছে। গত তিন বছর ধরে যে বৈশাখী ভাতা দেয় সরকার, তা নির্ধারিত শুধু ব্রাহ্মণ শ্রেণির জন্য। তাহলে কোন সে সমতার কথা বলি আমরা? কেন এত বৈষম্য তৈরি করি? বেসরকারি শিক্ষকরা তো বেশি কিছু দাবি করে না। তাঁরা তো রিক্রিয়েশন লিভ দাবি করেন না। তারা তো প্রয়োজনীয় ছুটিটাই দাবি করেন (এটাও তাঁরা কর্তৃপক্ষের নেক নজরে থাকলে পান, নতুবা তাও পান না)। তাঁরা শুধু বছরে দুটো উৎসব বোনাসে বৈষম্য চান না। বেসরকারি শিক্ষকরা দেশে একমাত্র অসাম্পদায়িক উৎসবের বোনাসটা আশা করেন। এসব চাওয়া কি তাদের বেশি চাওয়া? বিবেচনার ভার রইল কর্তৃপক্ষের কাছে।

কিছুদিন আগে বেসকারি শিক্ষকরা এমপিওর দাবিতে আন্দোলন করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের ফল এখনো পাননি। আদৌ পাবেন কিনা জানা নেই। গত পাঁচ বছরে শুধু পে-স্কেলে যুক্ত হওয়া ছাড়া বেসরকারি শিক্ষকরা আর কী পেয়েছেন? সহজ উত্তর, কিছুই না। অথচ দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীকে তারা শিক্ষাদান করেন। দেশের ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অংশ তৈরি হয় বেসরকারি শিক্ষকদের হাত ধরে। তাহলে কেন তাঁরা অধিকারের প্রাপ্য টুকু পান না? কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে তার কোন সঠিক জবাব আছে কিনা জানি না। শুধু জানি কিছু অন্তসারশূন্য আশার বাণী উচ্চারিত হয় বেসরকারি শিক্ষকদের উদ্দেশে। বলা হয় শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ানো হবে। আলাদা বেতন স্কেল দেয়া হবে। কত কীই না দেয়া হল, কত স্বপ্নই না দেখানো হলো। কিন্তু সব ফাঁকি। ছেলে ভোলানো গল্পের মতো। বঞ্চনার আর শেষ হল না বেসরকারি শিক্ষকদের। হয়তো হবেও না।


লেখক:  শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, মুড়াপাড়া কলেজ রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070128440856934