এমন একটি বোশেখ চাই - দৈনিকশিক্ষা

এমন একটি বোশেখ চাই

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |
লেখালেখির সুবাদে সারা দেশের অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে সখ্যতা আমার । তারা অনেকে ফোনে কথা বলে , ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে এবং ই-মেইল পাঠিয়ে জানতে চান -বোশেখি ভাতার খবর কী ? ৫% ইনক্রিমেন্টের কী হচ্ছে  ? সকল স্কুল-কলেজ কী সত্যি সত্যি এক সাথে জাতীয়করণ হবে ? -এ জাতীয় নানা প্রশ্ন । আমি খুঁজে পাইনে এ সব প্রশ্ন তারা আমাকে করেন কেন ? এ সবের উত্তরই বা আমি  কোথায় পাই ? তদুপরি এ সব প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তর দেবার কোন কারণ খুঁজে পাইনে । তাই,  ইতিবাচক উত্তরই দেই । কেননা, এ সব নিয়ে লেখালেখি করি । যারা এ সব প্রশ্ন করেন তাদের জন্যই তো লিখি । তাই, তাদের বলি-বোশেখি ভাতা পাবেন না কেন ?  পাবেন তো । না পাবার কোন হেতু  দেখি না । পহেলা বোশেখ বাঙালির সার্বজনীন উৎসবের নাম । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের  চেতনার সাথে সম্পৃক্ত একটি মাস । বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার এক সেতু বন্ধন । এ দেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সব ধর্মের লোকের বসবাস। পহেলা বোশেখ তারা পালন করে সার্বজনীন এক আনন্দ উৎসব । এ নিয়ে কোন ধর্মে কারো কোন মতভেদ নেই । এ আনন্দটুকু বিভাজন করে কে ? কে এটি দ্বি-খন্ডিত করতে পারে?
বৃটিশ আমলে ইংরেজ একবার বাংলা ভাগ করে উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছিল । বাঙালি জাতীয়তাবাদের বুকে ছুরি চালিয়েছিল ওরা । বাহ্যত ভৌগোলিক ভাবে বাংলাকে দু’ ভাগ করে মুলতঃ বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে চেয়েছিল । তার খেসারত ভারতবাসীকে কতো ভাবে কতো বার দিতে হয়েছে । এর চে’ আরো বেশী দিতে হয়েছে বাঙালি জাতিকে । ইংরেজ শাসকদের ও কম দিতে হয়নি । এক সময় বঙ্গবঙ্গ রদ হয় । কেননা, বাংলা মাকে দ্বিখন্ডিত করা চলে না । সে থেকে আমরা কত না শিক্ষা  পেয়েছি !
তারপর ও আমাদের বাঙালিয়ানা নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি । স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তি সময়ে এ জাতীয় ষড়যন্ত্র আরো অনেক হয়েছে । স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি যখন ক্ষমতায় , ঠিক তখন ও স্বাধীনতা বিরোধী ছদ্মবেশীদের আবার নতুন করে বাঙ্গালি স্বকীয়তায় আঘাত করার ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান । সে এক ক্ষুদ্র অপচেষ্টা বটে । কিন্তু, সুদুর প্রসারী তাদের ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনা ।
আসলে এ জাতির পুড়ো কপাল । বার বার একে বিভক্ত করে রাখার প্রয়াস চলেছে । জাতীয় নানা ইস্যুতে আমরা আজো দ্বিধা- বিভক্ত । দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জাতির জনক, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা-ইত্যাদি নানা  ইস্যুতে এখনো আমরা দ্বিধা-বিভক্ত এক কপাল পোড়া জাতি । সরকারের ভেতরে থেকে একটি শ্রেণি অতি সুকৌশলে এ সব বিতর্ক জিইয়ে রেখে তাদের ফায়দা তারাই লুটে চলেছে ।
 স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন , তাকে হত্যার মাধ্যমে সেটি ধ্বংস করার পাঁয়তারা শুরু হয় । সে পাঁয়তারা আজো অব্যাহত । তা না হলে একই সিলেবাস ও কারিকুলাম পড়িয়ে , সর্বক্ষেত্রে সমান দায়-দায়িত্ব পালন করে একই যোগ্যতা সম্পন্ন একজনে বোশেখি ভাতা পাবেন আর অন্য জনে পাবেন না- সেটি কী করে হয় ?
রাষ্ট্রের ইনসাফের একটা বিষয় থাকে । রাষ্ট্র সে ইনসাফটুকু যথারীতি পালন করতে পারলে সুশাসন নিশ্চিত । আমাদের আজ কতটুকু সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে  ?
যে কোন ধর্মে কারো ন্যায্য পাওনা দ্রুত মিটিয়ে দেবার তাগিদ । বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুগে যুগে কত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে । পাকিস্তানীরা যদি পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমুলক আচরণ করতো না , তবে আমাদের ইতিহাস আজ অন্য রকম হতো । পৃথিবীর ইতিহাসে যত আন্দোলন-সংগ্রাম কিংবা ক্ষোভের কথা জানি , সে সবের পেছনে বৈষম্য ও কারো না কারো ন্যায্য অধিকার মিটিয়ে না দেয়া নিয়ামকের কাজ করেছে ।
পাঁচ লক্ষ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি অত্যন্ত সুকৌশলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে । পৃথিবীর কোথাও কোন শিক্ষক এ রকম অবিচারের শিকার কোনদিন হয়েছেন কিনা- জানা নেই । কোন যুক্তিতে , কেন সেটি আটকিয়ে রাখা হয়েছে-সে কারণটা আজো খুঁজে পাইনে । যারা আটকে রেখেছে, তারা বোধ হয় তাদের গায়ের জোর টা দেখাতে চেয়েছে ।
বোশেখ ভাতা আর ইনক্রিমেন্ট দু’টোই অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের প্রতিশ্রুতি । এ দু’টো প্রতিশ্রুতিকে জাতীয় কমিটমেন্ট বলতে পারি ।
অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষিত হবার পর উচ্চ মহল থেকে বার বার বলা হয়েছে-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ ও নতুন জাতীয় স্কেলের আওতায় সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন । আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রি পর্যন্ত একথাটি বার বার বলেছেন। তিনি শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেলের কথা ও বলেছেন ।  কিন্তু, আজ প্রায় এক বছর হতে চলেছে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীগণ সকল সুবিধা তো নয়ই বরং এর মৌলিক দু’টো সুবিধা থেকে বঞ্চিত আছেন ।
জাতীয়করণের বিষয়টি এক্কেবারে সহজ কাজ । সরকারকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে একটি শ্রেণি সে সহজ কাজটি করতে দিচ্ছে না । একটি ঘোষনা দিয়ে সকল স্কুল-কলেজের যাবতীয় তহবিল সরকার নিয়ে নিলে দেখা যাবে কত হাজার হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা পড়েছে । এর ওপর সকল স্কুল-কলেজ মিলিয়ে আরো কত হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি । প্রতি মাসে ছাত্র বেতন থেকে আরো কয়েক শত কোটি টাকা আসতে পারে । অবশিষ্ট সামান্য লাগলে সে আমাদের জাতীয় বাজেটের ১% ও হবে না। সরকার তাই করলে দেশ ও জাতির অনেক মঙ্গল ।
শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে । মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হবে । সকল অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দুর হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা বাড়বে । নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা সহজ হবে । আরো কত সুবিধা । কেন আমাদের সরকার সে পথে হাঁটে না-কে জানে ।
বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিভক্ত করে যে বোশেখ – সেটি আমাদের কাম্য নয় । আমরা এমন একটি বোশেখ প্রত্যাশা করি , যেটি সব অনিয়ম দুর করে বৈষম্যহীন সমাজ, দেশ ও জাতি গঠনে সহায়ক হয় । অন্ততঃ শিক্ষা ও শিক্ষকদের বেলায় যেন কোনদিন কারো দু’নজর না থাকে।

 

মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005687952041626