এমপিও না পাওয়ায় জ্ঞান হারালেন ২ শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

এমপিও না পাওয়ায় জ্ঞান হারালেন ২ শিক্ষক

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার নারীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজ নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান না পাওয়ার খবর শুনে জ্ঞান হারিয়েছেন ২ মহিলা শিক্ষক। শিক্ষকরা হলেন, প্রভাষক ফারজানা আক্তার নেলি ও প্রভাষক নাসিমা আক্তার। আর দীর্ঘ অপেক্ষের পরেও এমপিওভুক্ত হতে না পেরে হতাশ শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে প্রভাষক মানসুর আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী যখন এমপিও ঘোষণা দিচ্ছিল তখন আশায় বুকটা ভরে গিয়েছিল। হয়ত বাবা-মা, সন্তানের মুখে হাসি ফুটাতে পারব। দুঃখের অবসান ঘটবে। বুধবার সারাদিন ও গভীর রাত পর্যন্ত এমপিওর তালিকায় প্রতিষ্ঠানের নাম খুঁজি। তিনি জানান, রাতে শেষ পর্যন্ত তালিকায় নাম না পেয়ে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী মানসিক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২৩ জন শিক্ষক ৮ জন কর্মচারী ও বিএম শাখাসহ বর্তমানে অধ্যয়নরত ৬৩৫ জন নারী শিক্ষার্থী কলেজের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অঝোরে কাঁদলেন। 

গণিতের প্রভাষক হাবিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে সম্মানজনক পেশা হিসেবে শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছিলাম। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। উল্লেখ্য, সারাদেশে ৯৩টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় একমাত্র হাজী কাশেম আলী কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে।
 
কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক মো. জয়নাল আবেদীন খোকা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এমপিওর আশায় দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে অর্ধাহারে-অনাহারে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছি। আমাদের বয়স বাড়ছে। আর কোথাও চাকরি করার সুযোগ নেই। আশা করেছিলাম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এমপিও হবে। সেই হিসেবে হলেও এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে।  

সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল নাছরিন বলেন, গত ৮ বছরে সহায় সম্পদ বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি এমপিওর আশায়। মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর গত ৮ বছরে উপজেলার নারী শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছে। শিক্ষকরা আর্থিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ভালো ফলাফল করছে। 

ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হান্নান তালুকাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এই কলেজ থেকে গত ৮ বছরে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ সহ ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য মেধাবী নারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের খ্যাতিমান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ৪টি মানদণ্ডে ২৫ নম্বর করে ১০০ নম্বরের ৭০ নম্বর পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় এমিপিও হওয়ার যোগ্যতা রাখে। নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষকের সংখ্যাও বেশি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। 

এই কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি মনে করি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব, কৃষক, দিনমজুর মেহনতি মানুষের মেয়ে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র ভরসা স্থল ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজ। এই কলেজটি তারাকান্দায় না থাকলে হয়তো আমার বাবা-মার পক্ষে লেখাপড়া করানো সম্ভব হত না। কম খরচে নিজ বাড়ি থেকে এসে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছি। জেলা শহরে রেখে লেখাপড়া করানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা আমার বাবা-মার নেই। এমন শতশত রিক্সাচালক, দিনমজুর, গরীব কৃষকের সন্তান লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করি, সাড়ে ৬০০ শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নারী হিসেবে নারী শিক্ষা বিস্তারে দ্রুত এমপিও করবেন। এমপিও না হওয়ায় শিক্ষকদের মন ভেঙ্গে পড়েছে। তাদেরকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। এই কলেজের সাড়ে ৬০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের চিন্তা করে একমাত্র আপনারাই পারেন এর সমাধান দিতে। 

এই কলেজের অধ্যক্ষ হোসেন আলী চৌধুরী বলেন, তারাকান্দা উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজটি কোটি টাকা মূল্যের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। এমপিও তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানের নাম থাকবে না একথা কখনো বিশ্বাস হয়নি। প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পর গত বছর এমপিওর জন্য আবেদন করি। নীতিমালা অনুযায়ী স্বীকৃতির ১০ বছরের জন্য গ্রেডিং ২৫ নম্বর দেয়া হয়েছে। স্বীকৃতির বয়স ৮ বছর হওয়ায় গ্রেডিং ৫ নম্বর কমেছে। ২০১৭ থেকে  ২০১৯ পর্যন্ত ৩ বছরে গড়ে পাসের হার ৬১ দশমিক ২৮ ভাগ। আবার দেখা গেছে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে শতকরা পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪৪ ভাগ ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পাসের হার ৭৫ দশমিক ০৭ ভাগ। পাসের হার শুধু এই কলেজে কমবেশি হয় না, কখনো বোর্ডের পাসের হারও কমবেশি হয়। 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মোট ৮৯টি উপজেলা ও থানা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির জন্য কাম্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক সামঞ্জস্যতা বিধানের জন্য এমপিও নীতিমালা ২০১৮-এ ২২ ধারা প্রয়োগ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় ২৩৫ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি, হাওড়-বাঁওড়, চরাঞ্চল, নারীশিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে। ৮৯টি উপজেলায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ জন এবং স্বীকৃতি মেয়াদ দুই বছর বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ৫৮টি প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়। 

গত বছর ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয় (বুয়েট) তৈরি করা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সারাদেশে এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হয়। এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০১৮-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, চারটি মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠান যাচাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের বয়স ২৫ নম্বর, শিক্ষার্থীর সংখ্যার ক্ষেত্রে ২৫ নম্বর, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ নম্বর এবং পাসের হারে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের গ্রেডিং করা হয়। সেখানে সর্বনিম্ন ৭০ নম্বর পাওয়া প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বলে তালিকা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এমপিওভুক্ত কমিটির আহ্বায়ক জাবেদ আহমদ বলেন, এবারের এমপিও ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে। কারণ এখানে কোনো তদবির বা অন্য কিছুর আশ্রয় নেয়া হয়নি। তবে ভৌগোলিক ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ বিবেচনায় কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিও পেয়েছে সেটি একটি মানদণ্ড রক্ষা করেই। তাই এ এমপিও নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043129920959473