এমপিওভুক্ত অধিকাংশ মাদরাসায় ন্যূনতম শিক্ষার্থী নেই - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্ত অধিকাংশ মাদরাসায় ন্যূনতম শিক্ষার্থী নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষার্থী না পাওয়া এবং অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে এ বছর সারাদেশের দুই শতাধিক মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হলেও আরও দুই শতাধিক মাদরাসা এমপিওভুক্তির কার্যক্রম চালাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাছাড়া বর্তমানে এমপিওভুক্ত অধিকাংশ মাদরাসায় ন্যূনতম শিক্ষার্থী নেই। পাঠদানের মানও ভালো না। শিক্ষকদের কেউ মাদরাসায় আসছেন, যাচ্ছেন; আবার কেউ কেউ নামেমাত্র উপস্থিতি দেখিয়ে মাস শেষে বেতনভাতা (এমপিও) ভোগ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসা শিক্ষার এই বেহাল দশা চলে আসলেও শিক্ষা প্রশাসন বরাবরই এ ব্যাপারে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন।

বিস্তারিত: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা বিভাগ সূত্র জানায়, প্রায় প্রতিবারই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থীও পরীক্ষায় পাস করেনি, অর্থাৎ শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের তালিকা সবচেয়ে বেশি থাকছে মাদরাসা। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে গত দু’তিন বছরে ৩/৪শ মাদরাসার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে শিক্ষা প্রশাসন। গত বছরের ৩০ মে ২০২টি মাদরাসা বন্ধ করে দেয় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, যেগুলোর বেশিরভাগই এমপিওভুক্ত। ওই সময় আরও ৯৬টি মাদরাসার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। অনেক মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভুয়া এবং অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী দেখিয়ে এমপিও সুবিধা নিচ্ছে। সারাদেশের মাদরাসার এই বেহাল দশা বিরাজমান থাকা সাত্ত্বেও এবার আরও দুই শতাধিক মাদ্রসা এমপিওভুক্তির প্রস্তাবিত তালিকায় রাখায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নতুন কোন মাদরাসাকে এমপিওভুক্তি না করে বর্তমান এমপিওভুক্ত মাদরাসায় জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ও মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আর বিশ্ব বাস্তবতার নিরিখে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষায় এমপিওভুক্তিতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া উচিত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও ‘জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর শেখ ইকরামুল কবির বলেছেন, ‘মাদরাসা এমপিওভুক্তি নিরুৎসাহিত করা উচিত। কারণ মাদরাসার এবতেদায়ির (প্রাথমিক স্তর) পর শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। বিশ^ বাস্তবতার নিরিখে এবতেদায়ি স্তর শেষে অভিভাবকরাও সন্তানদের সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষায় পাঠাচ্ছেন।’

শিক্ষাবিদ শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘২০১০ সালে এমপিওভুক্তির সময়ও শর্ত পূরণ না করা ৫২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হয়েছিল, যেগুলোর বেশিরভাগই মাদরাসা । ওইসব মাদরাসায় একজন, দু’জন কিংবা পাঁচ-সাতজন শিক্ষার্থী ছিল।’

এই শিক্ষা গবেষক আরও বলেন, ‘এমপিওভুক্তির পর প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা থাকবে না, একেবারে আয় থাকবে না; সেটাতো হতে পারে না। সরকারকে প্রতিষ্ঠানের নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বার্ষিক অডিট করে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে।’

২০১০ সালে সরকার এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- হাইস্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। এর মধ্যে মাদরাসা ছিল ২৮৯টি, যার মধ্যে দাখিল মাদরাসা ২৪৮টি, আলিম ৩১টি এবং ফাজিল মাদরাসা ছিল ১০টি।

ওই সময় সারাদেশে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান ছিল আট হাজার ৫৫টি। এবারও এমপিওভুক্তির জন্য প্রায় আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হতে পারে, যার মধ্যে প্রায় দু’শ মাদরাসা থাকতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

২০২টি মাদরাসা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জারি করা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নোটিশে বলা হয়েছিল, এসব মাদরাসা দাখিল স্তরের শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী বা কেন্দ্রস্থিত মাদরাসায় রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়। বন্ধ করার ব্যাখ্যায় বোর্ড বলেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দাখিল পাবলিক পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি। এর কারণ জানতে চেয়ে এসব মাদরাসা প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে অনেকেই এর জবাব দেয়নি, আর যারা জবাব দিয়েছে তাতে বোর্ড সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ কারণে এসব মাদরাসা অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ অনলাইনে পাসওয়ার্ড, মাদরাসা কোড নম্বর ও ইআইআইএন নম্বর বন্ধ করে দেয়া হলো।

বন্ধ হওয়ার মাদরাসার মধ্যে বাগেরহাটে ৪টি, বরগুনা ৫টি, বরিশালে ২টি, ভোলা ৬টি, বগুড়া ৪টি, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ১টি, চাঁদপুরে ১টি, চাঁপাইনাববগঞ্জে ২টি, চট্টগ্রামে ১টি, কুমিল্লায় ৩টি, দিনাজপুরে ১৯টি, গাইবান্ধায় ১২টি, যশোরে ৫টি, ঝিনাইদহে ১টি, জয়পুরহাটে ২টি, খাগড়াছড়ি ১টি, খুলনায় ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১টি, কুড়িগ্রামে ১টি, কুষ্টিয়া ৩টি, লালমনিরহাটে ৫টি, মেহেরপুরে ১টি, ময়মনসিংহে ৪টি, নওগাঁয় ১টি, নাটোরে ১১টি, নড়াইলে ১টি, নেত্রকোনা ১টি, নীলফামারিতে ৩টি, নোয়াখালীতে ১টি, পাবনা জেলায় ৫টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, পটুয়াখালীতে ৭টি, রাজবাড়িতে ২টি, রাজশাহীতে ১১টি, রংপুরে ৯টি, সাতক্ষীরা ৫টি, সিরাজগঞ্জে ১০টি, সিলেটে ১টি, ঠাকুরগাঁও-এ ২৬টি।

২০০৯ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়, যা ২০১০ সালে কার্যকর। শিক্ষানীতিতে সব ধরনের মাদরাসাকে একটি সুষ্ঠু ধারায় আনার পরামর্শ রয়েছে। কিন্তু প্রায় নয় বছরেও মাদরাসা  শিক্ষায় ‘শিক্ষানীতির প্রভাব’ খুব একটা পরেনি। প্রায় ১৬ হাজার এমপিওভুক্ত ও আংশিক এমপিওভুক্ত মাদরাসার কার্যক্রম তদারকি করারও যেন কেউ নেই। মাদরাসার সুপার ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ঢালাওভাবে এমপিওভুক্তি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর এমপিওভুক্তির দায়িত্বে রয়েছে। আর পরীক্ষা গ্রহণ, ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত কার্যক্রম অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিদর্শন করছে মাদরাসা  শিক্ষা বোর্ড।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্টার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গড়ে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ ভাগ মাদরাসার বিষয়েই বোর্ডে নানা রকম অভিযোগ আসে। আবার প্রতি শ্রেণীতে ৪/৫ জন শিক্ষার্থী নিয়েও অনেক মাদরাসা এমপিও সুবিধা নিচ্ছে; পাবলিক পরীক্ষায় এটা শনাক্ত হচ্ছে। এই ধরনের অভিযোগ বোর্ডে জমা হওয়ার তদন্ত সাপেক্ষে আমরা কেবল প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন বন্ধ রাখতে পারি। বোর্ড এমপিও বন্ধ করতে পারে না; সেটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’

দেশে ২৬ হাজার ৮১টি সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এবং ৭৭৫টি কারিগরি কলেজসহ ২৭ হাজার ৮১০টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের এমপিও বাবদ প্রতিমাসে সরকারের এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে দাখিল থেকে কামিল (ষষ্ঠ থেকে স্নাতকোত্তর) পর্যন্ত মোট এমপিওভুক্ত মাদরাসা আছে সাত হাজার ৬১০টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসা (ষষ্ট থেকে অষ্টম শ্রেণী) পাঁচ হাজার ৩৭১টি। এসব মাদরাসায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৭২ হাজার।

আর এমপিওভুক্ত আলিম মাদ্রাসা (এসএসসি সমমান) রয়েছে ৯৮২টি। এসব মাদ্রাসায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার। ফাজিল মাদ্রাসা (এইচএসসি সমমান) রয়েছে এক হাজার ১১২টি এবং এমপিওভুক্ত কামিল মাদ্রাসা (মাস্টার্স/স্নাতকোত্তর) রয়েছে ১৪৫টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষক আছেন।

সব মিলিয়ে এমপিওভুক্ত দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসায় মোট শিক্ষক আছেন এক লাখ ২০ হাজার এবং কর্মচারী আছে প্রায় ৪০ হাজার। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এছাড়াও এমপিওভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী) রয়েছে এক হাজার ৫১৯টি।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036129951477051