এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাঁদার টাকা বেসরকারি ব্যাংকে সরানোর নেপথ্যে - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাঁদার টাকা বেসরকারি ব্যাংকে সরানোর নেপথ্যে

হাবিবুর রহমান |

য়ে রাজনৈতিক দল যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে সেই দল বা দলসমূহের প্রকৃত অনুসারী, সমর্থক অথবা ছদ্মবেশী অনুসারী বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরাই অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণট্রাস্টের সচিবসহ সদস্য পদে যাওয়ার সুযোগ পান। আমার জানামতে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মোট ৪০জন এই দুটি কমিটিতে থাকার সুযোগ পেয়ে থাকেন। পদাধিকার বলে শিক্ষাসচিব এই দুই বোর্ডের সভাপতি। 

কিন্তু লক্ষ্য করেছি বিগত বিএনপি-জামাত আমলে মো: সেলিম ভূইয়া ও চৌধুরী মুগিছ উদ্দিন মাহমুদ পালাক্রমে ২০০৯ সালের মে মাস অব্দি অবসর ও কল্যাণের সচিব পদে ছিলেন। একটি মামলার প্যাঁচ দিয়ে আরো থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু অবিসংবাদিত শিক্ষক নেতা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির আউয়াল সিদ্দিকী স্যারসহ কয়েকজনের উদ্যোগে সেলিম-মুগিছের সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। অবসর ও কল্যাণের সদস্য-সচিব হয়েই মুগিছ মাহমুদ রিয়েল স্টেট ব্যবসা শুরু করেন। সেলিম ভুইয়া একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক বনে যান।   

২০০৫ সালে সেলিম ভুইয়া ও মুগিছ মাহমুদরা অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের কয়েকশ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়্ত্ব সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে একাধিক বেসরকারি ব্যাংকে রাখেন। তখন ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খান এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন লেখেন। ২০০৮ সালে সেলিম ভুইয়া যখন বিএনপি-জামাতের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে চান তখন সেই বেসরকারি ব্যাংক থেকে সেলিমকে নানাভাবে সহায়তা করেন বলে শিক্ষকরা বলাবলি করেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মুগিছ মাহমুদ পালিয়ে কয়েকদিন সীমান্তের ওপারে গিয়ে থাকেন মর্মে ওই সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়। কল্যাণট্রাস্টে শিক্ষকদের চাঁদা বাবদ জমানো টাকা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে বিতরণ না করে ব্যাংকে জমা রাখা বেআাইনী। অবসর ও কল্যাণের শত শত কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকে কেন রাখা হয়েছিলো? সুদ কে খেয়েছিলো? বিএনপি-জামাত জমানায় অবসর ও কল্যাণট্রাস্টের লুটপাটের কাহিনী শিক্ষকদের সামনে প্রকাশ করার দাবি জানাই।    

২০০৭-২০০৮ সালের কথা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম-সচিব ও পরে শিক্ষাসচিব মো: নজরুল ইলসাম খান ও তৎকালীন উপ-সচিব ও বর্তমানে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বাবলু সাহার উদ্যোগে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে সেলিম ভুইয়ার শিক্ষা জীবনের একাধিক তৃতীয় বিভাগ ও জাল জালিয়াতির নানা কাহিনী।  বিএনপি জমানায় একে হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে সেলিম ভুঁইয়ার নিয়োগও অবৈধ প্রমাণিত হয় ২০০৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের তদন্তে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের শিক্ষা সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খানের লেখা এক প্রতিবেদনে জানা যায় সেলিম ভুইয়ার নিয়োগসহ অন্যান্য জালিয়াতির কাহিনী। ২০০৪ ও ২০০৫ সালেও ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে সেলিম ভুইয়ার নানা কাহিনী জানা যায়। নবম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনের বিএনপির টিকেট পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেলিম ভুইয়া। নিউ এইজে প্রকাশিত সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সেলিম ভুইয়াকে বাদ দেয়া হয় মনোনয়ন থেকে। নিউ এইজের সেই সিদ্দিকুর রহমান খান এখন দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক।

সেই দৈনিক শিক্ষায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত সংবাদে দেখলাম অবসরের তিনমাসের মধ্যে মুগিছ উদ্দিন মাহমুদ টাকা পেয়েছেন। তার বাসায় চেক  পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আবার দেখলাম অবসরের পর টাকা পাওয়ার জন্য আবেদনের সাথে গোঁজামিল ও জালিয়াতি এবং অস্পষ্ট কাগজ জমা দেয়া সত্ত্বেও তিনমাসের মধ্যে কল্যাণের টাকা পেয়েছেন বিএনপি নেতা বরখাস্ত অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভুইয়া।

তাহলে অবসর-কল্যাণের টাকা যথাযথ কাগজ জমা দেয়া ছাড়া ও তিনমাসের মধ্যে পাওয়ার জন্য কি সব শিক্ষককে বিএনপির নেতা হতে হবে? শুনেছি সেলিম ভুইয়ার বাড়ী আর সাবেক রাষ্ট্রপতি, আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক অর্থমন্ত্রী. ‍মুক্তিযোদ্ধা ও সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে খুনীচক্রের অন্যতম প্রধান হোতা খোন্দকার মোশতাকের জেলায়। কল্যাণট্রাস্টের টাকা লুটপাট করা আরো একজন সাবেক সদস্য-সচিবের বাড়ীও একই জেলায়। তিনিও দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ।      

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে পড়াশোনা করে ঢাকার একটি বিখ্যাত বেসরকারি কলেজে কর্মরত আছি। আর মাত্র কয়েকবছর পরই আমি অবসরে যাবো। অবসর ও কল্যাণট্রাস্টের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ভালো কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নন। এমনকি তাদের সেইসব প্রতিষ্ঠানের নেই পযাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নেই ভালো ফল, সেইসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাসকরা শিক্ষার্থীরা কেউ বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এমনটাও শুনিনি।

অবসর ও কল্যাণট্রাস্টে শিক্ষকদের জমানো টাকা কোন ব্যাংকে কত জমা আছে ইত্যাদি বিষয় জানতে চাই। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার কাছে আরো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চাই।

হাবিবুর রহমান

 শিক্ষক, ঢাকা।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043439865112305