এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুপাত প্রথার অবসান চাই - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুপাত প্রথার অবসান চাই

মো. মঈনুদ্দিন চৌধুরী |

এমপিওভুক্ত কলেজে ৫ঃ২ অনুপাতে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।সম্প্রতি শিক্ষা বিষয়ক একটি পত্রিকা থেকে জানতে পেরেছি, এমপিওভুক্ত কলেজে ৩ঃ১ অনুপাতে সহকারী অধ্যপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হবে; তবে তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এই সংবাদ শিক্ষকদের আনন্দিত করলেও অনুপাত প্রথা জুড়ে দেয়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

কেননা অনুপাত প্রথা একটি অভিশপ্ত সিস্টেম। এটির মাধ্যমে কেউ পদোন্নতি পায়, আবার কেউ পায় না। তাছাড়া দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন- বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজে অনুপাত প্রথার অস্তিত্ব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বীকৃত কোনো জার্নালে প্রকাশনা থাকতে হবে। অন্যদিকে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভাগীয় পরীক্ষায় পাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের শিক্ষকদের যথাসময়ে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না।

এ প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কেন এবং কোন যুক্তিতে এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষকরা অনুপাত প্রথা নামক নারকীয় যন্ত্রণা ভোগের মধ্য দিয়ে পদোন্নতি তথা ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের মতো সাংবিধানিক ও ন্যায়সঙ্গত সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাবে? অনুপাত প্রথার পরিবর্তে এমপিও শিক্ষকদের প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিম্নে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে পেশ করছি- ১. প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাসহ প্রতিটি এমপিওভুক্ত শিক্ষকের স্বীকৃত কোনো আন্তর্জাতিক জার্নালে কমপক্ষে ২টি প্রকাশনা (আর্টিকেল) থাকতে হবে এবং তাদেরকে সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হবে। ২. প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষককে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদোন্নতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হতে হবে এবং সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। ৩. প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে প্রথম শ্রেণী/এমফিল/এমএস/পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী হতে হবে এবং একই সঙ্গে যে কোনো আন্তর্জাতিক জার্নালে কমপক্ষে একটি প্রকাশনা (আর্টিকেল) থাকতে হবে। এছাড়া তাদেরও সরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।

সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই- জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০-এর কোনো ধারায় নীতি প্রণেতারা অনুপাত প্রথার কথা উল্লেখ করেননি। জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়ের ৬৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যোগ্যতার নিরিখে (উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন, মৌলিক গবেষণা কর্ম, শিক্ষাদান পদ্ধতির উন্নয়ন ইত্যাদি) প্রতিযোগিতামূলকভাবে উচ্চতর পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে, যেমন- প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে। বেতন বৃদ্ধি সফল প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর যোগ্যতা অর্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে। বৃহত্তর পরিসরে শিক্ষকদের মৌলিক সুবিধাদি নিশ্চিত করে অন্যান্য সুবিধাদি অর্জিত যোগ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত করা হবে।

দেখা যাচ্ছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কী কী পদে পদোন্নতি দেয়া হবে কিংবা পদোন্নতির ধরন কী হবে; তা জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু জাতীয় শিক্ষা নীতি মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে এবং তারই আলোকে জনবল কাঠামো প্রণয়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে; সেহেতু এর বাইরে গিয়ে অভিশপ্ত অনুপাত প্রথা সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারির কোনো সুযোগ নেই। অতএব অনুপাত প্রথা বাতিল করে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি বৈষম্যহীন ও যুগোপযোগী পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন ও এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

লেখক:  সহকারী অধ্যাপক, শঙ্কুচাইল ডিগ্রি কলেজ, বুড়িচং, কুমিল্লা

 

সৌজন্যে: যুগান্তর

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0083539485931396