বিলুপ্ত ছিটমহলের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিলুপ্ত ছিটমহলের পাঠদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত ৬ই মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিলুপ্ত ছিটমহলের পাঠদানকৃত সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ ওয়াহিদা মুসাররত অনীতা স্বাক্ষরিত চিঠিটি গত ১১ই মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েে পৌছায়।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার অধীন বিলুপ্ত ছিটমহলে তিনটি হাইস্কুলকে পাঠদানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-দাশিয়ার ছড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, দাশিয়ার ছড়া সমন্বয়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়, দাশিয়ার ছড়া কামালপুর মাইনুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মইনুল মোস্তফা মহাবিদ্যালয়, দাশিয়ার ছড়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দাশিয়ার ছড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, হায়তগঞ্জ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুননেছা দাখিল মাদ্রাসা । সাহেবগঞ্জ কুরশা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। লালমনিরহাটে পাঠদানের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিনটি। এগুলো হলো-উত্তর গোধামারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাঁশকাটা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাঁশকাটা মমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া অনুমোদনহীন গোয়ালমারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর নীলফামারীতে মইনুল মোস্তফা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল রয়েছে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, এ যাবৎ ১৪টি স্কুলের পাঠদানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল। আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেগুলো অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি (পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট) মফিজার রহমান জানান, পঞ্চগড় জেলার অধীন ছিটমহলে পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মফিজার রহমান কলেজ, বঙ্গবন্ধু আলিম মাদরাসার দাখিল স্তর, রাজমহল উচ্চবিদ্যালয়, দেলুয়াডাঙ্গা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেখ রাসেল উচ্চবিদ্যালয়, তালডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়, মোজুহার হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, দিন বাজার উচ্চবিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুননেছা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেরাজুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমপি লুৎফর রহমান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিদর্শন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পাঠদানের অনুমতি ছাড়া সিরাজুল ইসলাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নববাংলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাজিরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলমহলের মানুষের মা। একজন মা সন্তানকে যেভাবে দেখেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ছিটমহলবাসীকে সেভাবে দেখেন। তার এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ আমাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে এমপিওভুক্তির বিকল্প নেই। শিক্ষার মাধ্যমে উন্নয়নের মূলস্রোত ধারায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে একীভূত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর পক্ষে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। তাতে বলেছি-আমরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। কর্মরত শিক্ষকরা এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। নিবন্ধনসহ সকল শর্ত শিথিল করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেছি।
২০১৫ সালের ১লা আগস্ট বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একাডেমিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সরকারের উপবৃত্তি সুবিধা পাচ্ছেন না। এ থেকেই দাবি ওঠে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।