এমপিওভুক্তির দাবিতে লাগাতার অবস্থান ১০ জুন - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তির দাবিতে লাগাতার অবস্থান ১০ জুন

শফিকুল ইসলাম |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ৭ জুনের মধ্যে বাজেটে বরাদ্দের ঘোষণা না আসলে ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। কর্মসূচি সফল করতে ২৮মে ৬৪ জেলায় প্রস্তুতি সভা করবেন নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বুধবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির হুমকি দেন। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা,কারিগরি) এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষক নেতারা বলেন, আগামী বাজেটে বরাদ্দ যথেষ্ট না হলে আমরা কম বেতন নিতেও রাজি আছি। পর্যায়ক্রমে কয়েকবছরে বেতন সম্পূর্ণ করা হলে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা আশা করি এ সরকারের আমলে এমপিওভুক্তির কাজ শেষ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক  ড. বিনয় ভুষণ রায়।। এ সময় বক্তব্য দেন সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার। উপস্থিত ছিলেন  সিনিয়র সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, শরিফুজ্জামান আগা খাঁন, দেবপ্রসাদ মণ্ডল, এমরান বিন সোলায়মান ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, আশরাফুজ্জামান লাবলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ না থাকলে  বাঁচা মরার মানবিক আবেদন নিয়ে রমজানের ভেতরে শিক্ষকরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০  বছর বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের আর চাকরি আছে মাত্র ৫ থেকে ১০ বছর। এ কারণে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর অপেক্ষায় না রেখে বর্তমান সরকারের মেয়াদে এই সমস্যার সমাধান হবে। এতো বছর পর কোনক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আংশিক সমাধান সমীচীন হবে না। স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু সংখ্যক এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিলে অসুস্থ প্রতিযোগিতার উদ্ভব ঘটবে। এ কারণে এমপিওভুক্তির সামগ্রিক সমাধান করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়,সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থ এবং যোগাযোগের মাধ্যমে যে করেই হোক এমপিওভুক্তির চেষ্টা চালাবে। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীরা সর্বস্বান্ত হবে।
নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে দিবারাত্রি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশন করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর ৫ জানুয়ারি আমরণ অনশন কর্মূসচি স্থগিত করেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। এদিন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসান ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত শিক্ষকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌছে দেন।

প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান শিক্ষকদের বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করতে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং শিক্ষামন্ত্রীও এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন অনশন ভেঙ্গে শিক্ষকরা যেন যাঁর যাঁর বাড়ি ফিরে যান এবং শ্রেণিকক্ষে ফেরেন।’

উল্লেখ্য, সরকারি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষরা এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশ পিপার স্প্রে ব্যবহার করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর একই বছরের ১৫ জানুয়ারি ন্যাম ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি করতে গেলে মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম পাশে পুলিশ বাধা দেয়। সেই বাধা থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। একপর্যায়ে পিছু হটেন শিক্ষকরা। সোবহানবাগের প্রিন্স প্লাজার সামনে অবস্থান করতে চাইলে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে অবস্থান করে। শিক্ষামন্ত্রী এই ঘটনার পর শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ৩ মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন।এই আশ্বাসে পেরিয়ে যায় দুই বছর।

এরপর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে প্রথমে শহিদ মিনারে সমাবেশ এবং পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন পালন করে ‘নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন’। সমাবেশ থেকে বলা হয়, সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে এই আন্দোলন চলবে। সরকার আবারও এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেয়। ওই আশ্বাসের পর কেটে যায় একবছর। এরপর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবার রাজপথে নামেন শিক্ষকরা। ওই সময় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার আশ্বাস দেয় সরকার। ওই আশ্বাসের পর শিক্ষকরা ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে আবার অবস্থান নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। প্রায় ২৮ দিন অবস্থান করার পর শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ফিরে যান বিদ্যালয়ে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও এমপিও প্রসঙ্গ না আসার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010788917541504