এমপিদের বই পোকায় খায় - দৈনিকশিক্ষা

এমপিদের বই পোকায় খায়

আহমদ সেলিম রেজা |

আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি। সংসদ ভবনের নিচতলায় এটি অবস্থিত। এমপি, গবেষক ও সংসদ সচিবালয়ের স্টাফদের জন্য এ লাইব্রেরি প্রতিদিন উন্মুক্ত থাকে। শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন হলেও সংসদ লাইব্রেরি সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অন্যান্য দিন খোলা থাকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এতে রয়েছে সুপরিসর দৃষ্টিনন্দন পাঠকক্ষ। রেফারেন্স সার্ভিস, রিসার্চ সার্ভিস, ইন্টারনেটসহ আধুনিক নানা সুবিধা। এমপিরা নিয়মিত লাইব্রেরিতে আসবেন।

সংসদীয় রীতি-নীতি ও আইনের নানা ব্যাখ্যা নিয়ে নতুন এমপিরা ইতিহাস থেকে পাঠ নিয়ে সমৃদ্ধ হবেন বলেই দেশে দেশে সংসদ লাইব্রেরি আইন প্রণয়নে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের আইনপ্রণেতাদের সুবিধার্থে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের গণভবনে ১৯৭২ সালে সংসদ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি বর্তমান সংসদ ভবনে স্থানান্তরিত হয়। অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের আইনসভার নথিপত্র থেকে পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সংসদীয় কার্যক্রমের এক বিশাল সংগ্রহশালা এই লাইব্রেরি। বিশ্বের বিভিন্ন জার্নাল, আইন, অধ্যাদেশ, ঘোষণা, সামরিক বিধি, সরকারি গেজেট, সংসদের বিতর্ক, অ্যাটলাস, মানচিত্র, গবেষণাপত্র, আউট অব প্রিন্ট বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থসহ এই লাইব্রেরির বইসংখ্যা ৮৬ হাজারের অধিক। কিন্তু সংসদ লাইব্রেরির রেজিস্ট্রারের অধিকাংশ পাতাই শূন্য। লাইব্রেরি থেকে বাসায় নিয়ে এমপিদের বই পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও বই ইস্যুর পরিসংখ্যান কোনো মাসেই ১০ ছাড়ায়নি। জাতীয় সংসদে ৩৫০ জন এমপি থাকলেও লাইব্রেরিমুখী হওয়ার সময় নেই তাদের। খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা যায়, সংসদ অধিবেশন থাকলেও লাইব্রেরিতে ১০ জন এমপির সমাবেশও ঘটে না।

নবম সংসদের শেষ দিকে সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল এসি সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেয়। এই ত্রুটি মেরামতে লেগে যায় দীর্ঘ দুই বছর। এই দীর্ঘ সময়ে লাইব্রেরির তাপমাত্রা রক্ষার জন্য কিছু স্ট্যান্ড এসি ও স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানায় সংসদ সচিবালয়। কিন্তু সঠিক তাপমাত্রা রক্ষিত না হওয়ায় অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হতে থাকে বই। সাংবাদিক পরিচয় লুকিয়ে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে লাইব্রেরিতে ঢুকে বই হাতে নিয়ে দেখা যায়, অনেক বই পোকায় খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। কয়েকটি বইয়ের পাতা ওল্টাতে গেলে ঝুরঝুর করে খসে পড়ল কাগজের টুকরো। অনেক বইয়ের কভার নষ্ট হয়ে গেছে। বইয়ের বাইন্ডিং খুলে গেছে। বইয়ের ব্যাক কভারে আঙুলের ছোঁয়া লাগলে উঠে আসছে বইয়ের লেখা। সংসদীয় কমিটি লাইব্রেরির এমন দুরবস্থার বিষয়টি নজরে আনলে সংসদ সচিবালয় একটি তদন্ত কমিটি করে দেয়। সম্প্রতি সে কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে ৯৮৭টি গ্রন্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বই রিপ্লেসমেন্ট করারও সুপারিশ করা হয়। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ লাইব্রেরির কর্মকর্তারা। লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা ঠিক যে কিছু বই নষ্ট হয়েছে। তবে এটা ঠিক নয় যে, বইগুলো পাঠযোগ্য নয়। কিছু বইয়ের কভার পেজ ও ব্যাক কভার নষ্ট হয়েছে। কিছু বইয়ের বাইন্ডিং ছুটে গেছে। পেছনের লেখা মুছে গেছে। এসব বই পুনরায় বাইন্ডিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক আগে প্রায় দুই বছর সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করায় বইগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি বইও রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়নি। এখন এসি ঠিকমতো কাজ করছে। এ ছাড়া লাইব্রেরির সংস্কার কাজ শেষ হলে প্রতিটি বইয়ের র‌্যাকের ফাঁকে ফাঁকে হিউমিডিটি ফায়ার সিস্টেম বসানো হবে, যাতে আর কখনো কোনো বই নষ্ট না হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, গত আট বছরের ধারাবাহিক অযত্ন-অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে লাইব্রেরি এই করুণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এমপিরা লাইব্রেরিতে যান না। সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন এমপি মাত্র লাইব্রেরি ব্যবহার করেন। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ মন্ত্রী ও কিছু এমপি লাইব্রেরি সার্ভিস ব্যবহার করেন। লাইব্রেরির কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকেন এমপিদের লাইব্রেরি সার্ভিস দিতে। ফলে লাইব্রেরির বইগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কি না তা দেখার কেউ নেই। বিষয়টি স্বীকার করে নেন ডেপুটি স্পিকার। বলেন, ‘বর্তমান এমপিরা খুব কমই লাইব্রেরি ব্যবহার করেন। ওদিকে যেতে চান না। তবে আমি প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে লাইব্রেরিতে যাই। ঘুরে দেখি। পড়াশোনা করি।’ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অনেক গবেষক এখানে আসেন নিয়মিত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেন, ‘লাইব্রেরির কাজ তদারকির জন্য একটি লাইব্রেরি কমিটি আছে। আমাদের কাজ রুটিন ওয়ার্ক সম্পাদন।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংসদের লাইব্রেরি কমিটি নামে যে কমিটি আছে, সেই কমিটির বৈঠক হয় না নিয়মিত। ১০ সদস্যের লাইব্রেরি কমিটিতে যারা আছেন, তাদের মধ্যে সভাপতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া ছাড়া মাত্র দুজন সদস্য নিয়মিত (সপ্তাহে একবার) লাইব্রেরিতে যান। কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈঠক হলেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। তবে শুরুতে লাইব্রেরি নিয়ে তাদের ভালোই আগ্রহ ছিল। লাইব্রেরি সংস্কারের সুপারিশ করেন তারা। এ জন্য ২০১৫ সালের জুলাই মাসে লাইব্রেরির রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের ধারণা নিতে কমিটির সদস্যদের নিয়ে ডেপুটি স্পিকার ঘুরে এসেছেন ভারতীয় লোকসভার লাইব্রেরি। ইতিমধ্যে লাইব্রেরির সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হতে লাগবে এক বছর। সংস্কারের পর এ লাইব্রেরি লোকসভার চেয়ে আধুনিক লাইব্রেরিতে পরিণত হবে বলে আশা করছেন লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। সংসদ লাইব্রেরি ব্যবহারকারী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি কবি কাজী রোজীর কাছে লাইব্রেরির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘লাইব্রেরিতে এখন ভাঙচুর চলছে। সংস্কারকাজ চলছে। বড় করার পরিকল্পনাও আছে। তবে এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারব না।’

 

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061290264129639