এমসি কলেজ ছাত্র সংসদ ভবনই বেদখলে - দৈনিকশিক্ষা

কলেজে জাগুক প্রাণএমসি কলেজ ছাত্র সংসদ ভবনই বেদখলে

চয়ন চৌধুরী, সিলেট |

প্রায় তিন দশক পর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড়। এ হাওয়া লেগেছে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। ঐতিহ্যবাহী এবং নামি কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাও এখন নির্বাচনের দাবিতে সরব। তারা চান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সব স্থবিরতা কাটিয়ে ক্যাম্পাসে জাগবে প্রাণ

১৯৯১ সাল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তখন সরকার গঠন করেছে বিএনপি। অন্যদিকে সিলেটের প্রাচীনতম এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ও গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী মুরারীচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ ও জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য। কিন্তু ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করল কলেজের পরিবেশ।

এ পরিস্থিতিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত এড়াতে কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করল। তার পর দীর্ঘ ২৭ বছরে আর নির্বাচন হয়নি ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটিতে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে  যাওয়ার কয়েক বছর পর থেকে এর কার্যালয়ও ব্যবহূত হতে শুরু করেছে ভিন্ন কাজে। অবশ্য কার্যালয়ের দ্বিতল ভবনটির সামনে ছাত্র সংসদের সাইনবোর্ডটি আজও ঝুলছে।

তবে ভেতরে চলছে ইংরেজি বিভাগের অফিস ও সেমিনার কক্ষের কাজ। তিন বছর আগে ভবন সংকটের অজুহাতে ছাত্র সংসদ কার্যালয় ভবনে স্থাপন করা হয় ইংরেজি বিভাগের অফিস ও সেমিনার কক্ষ। এক দশক আগে ছাত্র সংসদের ওপরতলায় বিদেশি ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই বেদখল পর্বের শুরু। 

ছাত্র সংসদ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও মহাবিদ্যালয়টির ১৪ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতি বছর ছাত্র সংসদের জন্য নির্ধারিত ফি ঠিকই দিতে হচ্ছে। এক সময় এই ফি ছিল ১০ টাকা। কয়েক বছর ধরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ টাকা। গত আড়াই দশকে এ খাতে জমা হওয়া টাকা কোন কাজে লাগছে, ছাত্র সংসদ কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও ফি বাড়ানোর কারণ কী- এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অবশ্য কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ জানাচ্ছেন, ছাত্র সংসদের ফি বাবদ নেওয়া টাকা নির্ধারিত খাতেই জমা রয়েছে।

রাজা গিরীশ চন্দ্র রায় ১৮৯২ সালে নগরীর টিলাগড় ও বালুচর এলাকায় ১২৪ একর জমিতে প্রমাতামহ মুরারীচাঁদের নামে এ মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন। তখন এটি ছিল অখণ্ড ভারতের আসামের প্রথম কলেজ। ১৯৩২ সালে এ কলেজে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র তৈরি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কাল পরিক্রমায় এ কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অথচ দীর্ঘ আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় রুদ্ধ হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব গঠন ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রক্রিয়া। 

সরেজমিন এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরি ও শহীদ মিনারের মধ্যে ছাত্র সংসদ ভবনে চলছে বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইংরেজি বিভাগের অফিস ও সেমিনার কক্ষের কার্যক্রম। ইংরেজি বিভাগের অফিস সহকারী অরবিন্দ তালুকদার  জানান, কলেজটির ইংরেজি বিভাগের নিজস্ব ভবন নেই। শ্রেণিকক্ষেরও সংকট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৫ সাল থেকে ছাত্র সংসদ ভবনে বিভাগের অফিস ও সেমিনার কক্ষ নিয়ে আসা হয়। তিনি জানান, তারা আসার আগে থেকেই এখানে বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছিল। 

সম্প্রতি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি উঠতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের এমসি কলেজ শাখার আহ্বায়ক সাদিয়া নওশীন তাসমিন বলেন, কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে কার্যকর ছাত্র সংসদ প্রয়োজন।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে অন্যদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ছাত্র সংসদ গঠিত হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসবে। তিনি বলেন, সংসদ ভবন বেদখল হয়ে গেছে। অথচ প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংসদ ফি নেওয়া হচ্ছে। এর তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছে, তা কোনো কাজে ব্যবহূত হচ্ছে কি-না- এসবের স্বচ্ছ জবাবদিহি প্রয়োজন।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বাম ঘরানার দলগুলো কিছুটা সরব হলেও এ কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য মেলেনি। তবে বিভিন্ন ফোরামে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে দাবি তুলছেন ছাত্রলীগের নেতারা। ২০০৩ সালে তাজিম উদ্দিনকে সভাপতি ও সাইফুল ইসলাম টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগ কর্মী উদয়ন সিংহ পলাশ হত্যার পর এ কমিটি বাতিল করা হয়। 

এমসি কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একটি আংশিক কমিটি রয়েছে। এ কমিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ নেই। তার পরও শিক্ষা ও গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে তারা চান ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও মুরারীচাঁদ কলেজের ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হোসাইন আহমদ বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারব না। তার পরও চাই নির্বাচন হোক। কারণ নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, প্রাচীন এ কলেজে যেমন অনেক সংকট রয়েছে, তেমনি সম্ভাবনাও রয়েছে। ছাত্রলীগ বরাবরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিতে সরব। তার পরও বলব, ছাত্র সংসদ থাকলে ভালো হতো। 

কলেজের ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক- এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। ক্যাম্পাসে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ নির্বাচন হলে কলেজে প্রাণ ফিরে আসবে। 

এমসি কলেজ ছাত্রদলের তিন সদস্যের কমিটির প্রথম সদস্য রুবেল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে কলেজ ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের পরিবেশ নেই। পরীক্ষা থাকলেও ছাত্রদলের কেউ ক্যাম্পাসে যেতে পারে না। গেলেই হামলা-মারধর করা হয়। নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা থাকার পরও ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের স্বার্থে ছাত্র সংসদ চায় বলে মন্তব্য করেন রুবেল। ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক কাওসার আহমদ বলেন, সবার প্রত্যাশা ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির সঙ্গে কর্তৃপক্ষ একমত- এ কথা জানিয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নিতাই চন্দ্র চন্দ দাবি করেন, এক বছর আগেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের এ নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি, তবে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হয়েছে। এখন যেহেতু ডাকসু নির্বাচনের কথা হচ্ছে; আশা করি, এমসি কলেজেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। ছাত্র সংসদ ভবনে অন্য বিভাগের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে বসার জন্য সুবিধামতো কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হবে। 

সুত্র: সমকাল

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0084989070892334