এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : আরেক আসামি তারেক গ্রেফতার - দৈনিকশিক্ষা

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : আরেক আসামি তারেক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঘটনার সময় তার মুখভর্তি ছিল দাড়ি, মাথায় চুল। লম্বা দাড়ি কামিয়ে, মাথা মুড়িয়ে, লুঙ্গি পরে বেশ বদল করেছিল, যাতে সহজে চেনা না যায়। শেষ পর্যন্ত পার পায়নি সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৯। এর মধ্য দিয়ে এজাহারভুক্ত ছয় আসামিই গ্রেপ্তার হলো।

কলেজের প্রধান ফটক থেকে স্বামী-স্ত্রীকে জোর করে গাড়িতে তুলে ছাত্রাবাস পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে নিয়েছিল তারেকই। সেখানে গৃহবধূকে ধর্ষণের পাশাপাশি স্বামীর মানিব্যাগ থেকে নগদ দুই হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয় তারেক। এদিকে ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলাসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি। গতকাল বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কলেজ) মো. নূরে আলম ও সহকারী পরিচালক (কলেজ) লোকমান হোসেন।

গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা এমসি কলেজে পৌঁছে প্রথমে অধ্যক্ষ সালেহ আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা ছাত্রাবাস পরিদর্শনে যান।

তদন্ত কমিটির প্রধান শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, 'এমসি কলেজ দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল দেখলাম। কলেজ কর্তৃপক্ষসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলব।'

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, 'কলেজের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ত্রুটি আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখব।' করোনাকালে ছাত্রাবাস খোলা রাখার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ বিষয়টিও জানার চেষ্টা করছি।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ভিকটিমের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে সম্ভব হলে কথা বলার চেষ্টা করব।' আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে ৭ দিনের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবেন বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটিও গতকাল কাজ শুরু করেছে। বিকেলে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ কমিটির প্রধান আনোয়ার হোসেন।

অন্যদিকে গতকাল মামলার এজাহারভুক্ত একজনসহ আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মহানগর হাকিম (২য়) সাইফুর রহমান শুনানি শেষে মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ৭ জনের মধ্যে ছয় জনকে রিমান্ডে নিল পুলিশ।

হাইকোর্টের নির্দেশ :কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার দায় নিরূপণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে মুখ্য মহানগর হাকিম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে সদস্য হিসেবে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মারফত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- জানতে চেয়েও রুল জারি করেছেন আদালত।

'কুলাঙ্গারের ফাঁসি চাই' :গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনকে আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। এদের প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে মহানগর হাকিম (২য়) সাইফুর রহমানের আদালতে নেওয়ার সময় উৎসুক জনতা 'ফাঁসি চাই', 'কুলাঙ্গারের ফাঁসি চাই' বলে স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই পুলিশ দ্রুত তাদের আদালতে নিয়ে যায়। গতকালও আসামিদের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আগের দিন সোমবার তিন আসামিকে আদালতে আনার পরও বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে স্লোগান দিয়েছিল।

রাষ্ট্রপক্ষে সহায়তাকারী অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, আদালতে হাজির করার পর আসামিরা স্বাভাবিক ছিল। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।


মাহফুজুরকে হস্তান্তর :জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কানাইঘাট থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার এজাহারভুক্ত আসামি মাহফুজুর রহমান মাছুমকে শাহপরান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে হস্তান্তর করার কথা নিশ্চিত করেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা।

সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারন করা হয়। লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে মাহফুজুর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় লুঙ্গি পরনে থাকলেও গতকাল হস্তান্তরের সময় মাহফুজুরের পরনে জিন্সের প্যান্ট দেখা গেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের সামলোচনা প্রসঙ্গে কানাইঘাট থানার ওসি শামসুদ্দোহা জানান, তার ইচ্ছায় সে প্যান্ট পরেছে।

জিজ্ঞাসাবাদ চলছে :দুই দিনে রিমান্ডে পাওয়া ছয় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশের তদন্তসংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। সাইফুর, অর্জুন, রবিউল, মাহবুবুর, রাজন ও আইনুদ্দিনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অচিরেই তাদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি জানান, প্রাথমিক অবস্থায় শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে কার কী ভূমিকা ছিল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা বলেন, সব বিষয়েই তদন্ত হচ্ছে। এখনও সবকিছু প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

সার্টিফিকেট স্থগিতসহ ১০ দাবি :সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল, সার্টিফিকেট স্থগিতসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে 'কলেজের সকল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন'। গতকাল দুপুরে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে এসব দাবি জানান। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ শেষ করেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা, সব অপরাধীর ছাত্রত্ব বাতিল ও সার্টিফিকেট স্থগিত করা, ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের সার্বিক ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হোস্টেলকে সাবেক ছাত্র ও বহিরাগতমুক্ত করা, পুরো কলেজ ক্যাম্পাস ও হোস্টেল সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় নিয়ে আসা, হোস্টেলে রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, কলেজ ও হোস্টেলের নিরাপত্তায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, কলেজের সব ছাত্রছাত্রীর জন্য একটি উন্মুক্ত অভিযোগ বাক্স তৈরি করা।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055241584777832