বগুড়ার শাজাহানপুরে ব্যবহারিক পরীক্ষায় আগাম ঘুষ না দেয়ায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শাজাহানপুর উপজেলা একাডেমিক অফিসার আমিরুল ইসলাম ও মানিকদিপা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনার প্রতিবাদে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগসাজশের পর গত বৃহস্পতিবার এসএসসির রসায়ন বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয়টির এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বেছে বেছে খাতা কেড়ে নেন আমিরুল ইসলাম। ঘটনার পর বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের কাছে অভিযোগ দিতে চাইলে তিনি ‘অফিস সময়’ ছাড়া অভিযোগ নেবেন না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগে এসএসসির ফরম পূরণের সময়ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন প্রধান শিক্ষক।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মানিকদিপা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা ঝোলানো হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার দিকে তালা খুলে দেয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করে পরীক্ষার্থীরা। সেদিন থেকেই প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বিদ্যালয়ে আসছেন না।
জানা যায়, এবার মানিকদিপা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬২ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ ব্যবহারিক পরীক্ষা জন্য প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ ২০০ টাকা করে দাবি করেন। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা দিতে অস্বীকার করায় প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। বৃহস্পতিবার ছিল রসায়ন ও পৌরনীতি পরীক্ষা। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আমিরুল ইসলাম কক্ষে ঢুকে বেছে বেছে মানিকদিপা স্কুলের আরিফুল ইসলাম, আব্দুল ওহাব, মেহেদী হাসান, তানিয়া আকতার, মমতাজসহ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র কেড়ে নেন।
আল আমিন, মোজাহিদ, আরিফুল, ওহাব, মেহেদী, তানিয়া, সাদিয়া, মমতাজ জানায়, ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য টাকা না দেয়ায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ পরীক্ষাকেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এতে করে পরীক্ষার ফল ভালো হবে না। পরীক্ষায় অকৃতকার্য করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তা ছাড়া ফরম পূরণের সময় জোর করে চার হাজার পাঁচ শ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ক্ষতি করার আশঙ্কায় সে সময় কিছু বলা হয়নি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষককে এই বিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইনসান আলী অসৎ চরিত্রের লোক। এঁরা পরামর্শ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কায়দায় টাকা দাবি করেন। তাঁদের বদ স্বভাবের কারণে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হতে বসেছে। পরীক্ষার ফল খারাপ হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন তাঁরা।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ না নিয়ে অফিস সময় ছাড়া অভিযোগ নেয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে। যদিও একজন ইউএনও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করার কথা।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আমিরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে পরীক্ষা কেন্দ্রের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাঁর। পরীক্ষা চলাকালে কক্ষের ভিতর পরীক্ষার্থীরা হৈচৈ ও সেটকোড মিলিয়ে পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় কয়েকজন পরীক্ষার্থীর খাতা নেয়া হয়েছিল। কয়েক মিনিট পর আবার দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো কথা বা কোনো অভিযোগ ওঠেনি। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ করে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের অভিযোগ মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ঘটনার পর থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।