প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসএসসি পর্যন্ত পাঠক্রমে কোনো বিভাগ বিভাজনের দরকার নেই। এছাড়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞানকে বাধ্যতামূলক করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ ২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন সরকার প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত দেশসেরা ১৭২ শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন তিনি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উদ্যোগে দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৮ জন ছাত্রী ও ৮৪ জন ছাত্রকে এই স্বর্ণপদক দেয়া হয়।
এসময় শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। জাতির পিতার এ মূল্যবান কথাটি শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর দেশটাকে গড়ে তুলবে।
সরকার প্রধান আরও বলেন, সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সঠিক শিক্ষা যেন শিক্ষার্থীরা পায়, সে দায়িত্ব শিক্ষকদের নিতে হবে। এ দেশের ছেলেমেয়েদের মেধাবী বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা আমরা বলছি, এখানেও আমাদের ছেলে-মেয়েদের সেভাবে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে এবং সেটা আরও বিকশিত হলে সেখানে আমাদের জনশক্তি লাগবেই। আমাদের জনসংখ্যাকে আমরা যদি কারিগরি, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে সেভাবে দক্ষ করে যদি গড়তে পারি তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না বরং আমরা অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারব। তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সে লক্ষ্যে একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেক্ষেত্রে আমরা কাউকেই অবহেলা করতে চাই না। যে কারণে আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে অনার্স কোর্স চালু এবং প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কওমি মাদ্রাসাকেও আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দিয়েছি। কারণ তাদেরকেও আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। একই ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী ইউজিসিকে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে তারা আরও মেধাবী হয়ে গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে দেশটা কীভাবে চলবে তার একটা পরিকল্পনা আমরা রেখে যাচ্ছি’।
পদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘শিক্ষার মানোন্নয়ে কী কী প্রয়োজন, যা প্রয়োজন আমরা তাই করবো।’
শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। মেরিটাইম ও অ্যারোস্পেস ইউনিভারসিটি করা হয়েছে। আগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, তাও করা হয়েছে।
এখন প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য অনেকগুলো প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কতো ছাত্র-ছাত্রী থাকবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হবে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে চান বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে এবছর দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনকারী ১৭২ শিক্ষার্থীকে (৮৮ জন ছাত্রী ও ৮৪ জন ছাত্র) ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’দেয়া হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৬৩ জন শিক্ষার্থীকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। দেশের বিশ্ববিদ্যালসমূহের কৃতি শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও অধ্যয়নে উৎসাহ প্রদানের জন্য ইউজিসি ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রবর্তন করেন।