এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যারপরনাই খুশী। তবে, দৈনিকশিক্ষা ডটকমের প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেছেন ভিন্ন কথা। নিজেদের মেধার জোরে ফলাফলে এগিয়ে থাকায় ছাত্রীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান এন আই খান। পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও একটি দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। দায়িত্বটি এখনই পালন না করলে অদূর ভবিষ্যতে সঙ্কটে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরিতে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা অব্যাহতভাবে এগিয়ে গেলে সামাজিকসহ নানা সঙ্কট তৈরি হতে পারে। তাই এখনই ছাত্রীদের এগিয়ে যাওয়া এবং ছাত্রদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশদ গবেষণার পরামর্শ দিয়েছেন এন আই খান।
৬ মে সন্ধ্যায় আলাপকালে এন আই খান বলেন, পৃথিবীর কয়েকটি দেশে শিক্ষা-দীক্ষা ও চাকরিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এগিয়ে থাকা ও পরবর্তী সময়ে নানা সঙ্কটে পড়ার সাম্প্রতিক উদাহরণ রয়েছে। মালয়েশিয়ার উদাহরণ টেনে এন আই খান বলেন, ‘ওই দেশের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। তাঁর মুখ থেকে শুনেছি এগিয়ে থাকা মেয়েদের সারাজীবনের কষ্টকথা। ভালো অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলের অভাব, ভালো চাকরিওয়ালা ছেলেদের অভাব মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে। ছেলেগুলো বখাটে ধরনের আর মেয়েরা অধিকতর যোগ্য। এটা ইমব্যালান্স, গভীর সামাজিক সঙ্কট। ব্যালান্স থাকাটা জরুরি। ব্যালান্স রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের।’
ভবিষ্যতে এমন সঙ্কটে বাংলাদেশকে না পড়তে হয় সেজন্য কিছু করণীয় রয়েছে শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। মেধার জোরে এগিয়ে থাকা মেয়েদের ভালো ফলে উৎসাহ দেয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ছেলেদের ঘরমুখী করতে হবে, তাদেরকেও ভালো ফলে উৎসাহী করে তুলতে হবে। মাদকের ছোবল থেকে ছেলেদের রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিতে হবে শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে ছাত্রীদের এগিয়ে থাকার কয়েকটি কারণ আমরা জানলেও কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা নেই। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উদ্যোগে একটা বিশদ গবেষণা করা জরুরি।
কোচিং ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন করানোর ওপর জোর দিয়েছেন সাবেক শিক্ষাসচিব এন আই খান। তিনি বলেছেন, একটা ডিজিটাল বোর্ড থাকবে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের কোন শিক্ষক কেমন পড়ান, কোচিংয়ে যেতে বলেন কি-না, ব্যবহার কেমন ইত্যাদি বিষয় লিখবে। এটা ম্যানুয়ালিও হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা শিক্ষকদের সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের করা মন্তব্য বা মূল্যায়ন দেখতে পারবেন। এমনটা শুরু হলে আপনাআপনিই শ্রেণিকক্ষেই পাঠদানে মনোযোগী হবেন শিক্ষকরা। শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। শিক্ষায় সুশাসন খুব জরুরি। কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করাতে চাইলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন। পাশাপাশি শিক্ষকদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।