ওষুধ নকলের প্রবণতা : কারণ ও প্রতিকার - দৈনিকশিক্ষা

ওষুধ নকলের প্রবণতা : কারণ ও প্রতিকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রির বিষয়টি নতুন কিছু নয়; বরং অনেক পুরোনো এবং বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এ প্রেক্ষাপটে এসব প্রতিরোধের দায়িত্ব যাদের, তাদের গাফিলতির কারণেই আজ রাজধানী শহর ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত সবখানেই ছেয়ে গেছে নকল ও ভেজাল ওষুধের বিষবাষ্প। অবস্থা আজ এমন শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর পেছনে দায়ী— (ক) ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং ওষুধ উত্পাদনকারী দেশীয় কোম্পানিগুলোর দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা; নিজ কোম্পানির ওষুধ নকল হচ্ছে কি না নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে তা তদারকির যথেষ্ট অভাব রয়েছে উত্পাদনকারী কোম্পানিগুলোর। (খ) দফায় দফায় ওষুধের অপরিকল্পিত মূল্য বৃদ্ধিকরণ ওষুধের বাজারে ভেজাল ও নকল ওষুধের রমরমা ব্যবসার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। কেননা, ভেজাল বা নকল ওষুধ তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে হাতের নাগালে পাওয়ায় ভোক্তা সাত-পাঁচ না ভেবেই নকল ওষুধের প্রতি ঝুঁকছে। (গ) জাতীয় ওষুধ নীতিমালা-২০১৬ অনুযায়ী খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করে খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি করা। এবং (ঘ) মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক ফার্মেসিগুলো থেকে ফেরত না নেওয়াও নকল আর ভেজাল ওষুধ ছড়ানোর অন্যতম কারণ। সোমবার (৭ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, নকল ওষুধের অপ্রতিরোধ্য দৌরাত্ম্য নির্মূল করতে উপর্যুক্ত চারটি বিষয় নজরদারির পাশাপাশি সবচাইতে বেশি প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইন যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। কেননা, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (গ)-এর ১ (ঙ) ধারায় খাদ্য বা ওষুধে ভেজাল মেশালে এবং বিক্রি করলে অপরাধী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনের খাতায় এমন শাস্তির বিধান থাকলেও এদেশের মানুষ কখনো শোনেনি খাদ্য/ওষুধে ভেজাল মেশানো অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে কারো মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

মাঝেমধ্যে আমাদের চোখে যা পড়ে তা হচ্ছে নকল/ মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রেতাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খানিকটা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তবে সেই জরিমানার অঙ্ক এতটাই সামান্য যে, অপরাধী তাত্ক্ষণিকভাবে সেই জরিমানা পরিশোধ করে কয়েকটা দিন ক্ষান্তি দিয়ে বহাল-তবিয়তে পুনরায় সেই একই কর্মে মেতে ওঠেন। যা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ব্যাপার।

প্রয়োজনে আইন কঠোর করার পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ওষুধ কারখানাগুলো বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেকটি কোম্পানির ওষুধের প্রতিটি পাতায় ইউনিক কোড সংযুক্ত করতে হবে এবং বাড়তি জনবল দিয়ে ওষুধ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের প্রতিটি পাতায় মেয়াদ সংযোজন করতে হবে। কেননা, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে পাঁচ বা দশ পাতার একটি প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ উল্লেখ করা থাকে। সেক্ষেত্রে ক্রেতার অধিকাংশ সময়ই মেয়াদ পরখ করে ওষুধ কেনার সুযোগ থাকে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওষুধ বিক্রেতা ক্রেতাকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের মতো প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র অনায়াসে সরবরাহ করছে। আবার কখনো কখনো মেয়াদ আছে এমন ওষুধের প্যাকেটে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রেখে বিক্রির মতো ঘটনাও ঘটছে এদেশে। তবে, এত সবের পরেও একজন ক্রেতার দায়িত্ব হচ্ছে ভালোভাবে যাচাই করে তবেই ওষুধ কেনা। যাচাই করে পণ্য কেনা একজন ক্রেতার অধিকার। যদিও বর্তমানে কারিগরি উন্নয়নের ফলে আসল ও নকল ওষুধের পার্থক্য নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। তবুও কিছু চিহ্ন এবং বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে নকল ওষুধ চেনা সম্ভব। নকল ওষুধের অদ্ভুত রকমের রং, গন্ধ এবং স্বাদ হয়ে থাকে। এ ধরনের ওষুধ সাধারণত ভঙ্গুরশীল হয়; খুব সহজেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। নকল ওষুধের প্যাকেটের গুণগতমান খুব একটা ভালো হয় না। লেবেলের নির্দেশনায় ভুল বানানের শব্দ থাকে এবং কখনো কখনো নির্দেশনায়ও ভুল থাকে। নকল ওষুধের দাম অনেক কম হয়।

সর্বোপরি, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কোনো ওষুধের ওপর সন্দেহ হলে প্যানাসিয়া (www.panacea.live) নামের ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করার সুযোগ রয়েছে। প্যানাসিয়ার আওতায় থাকা নির্দিষ্ট ওষুধের প্রতিটি পাতায় একটি করে ইউনিক কোড থাকে। এই কোডটি ‘২৭৭৭’ নম্বরে মেসেজ করে পাঠালে তাত্ক্ষণিকভাবে ফিরতি মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হবে ওষুধটি আসল না নকল। এছাড়াও যে সকল ওষুধের মোড়কে ইউনিক অথেনটিকেশন কোড লেখা থাকে সে সব ওষুধের ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ অনুমিত হলে অথেনটিকেশন কোডটি ‘৯৯০১০৯৯০১০’ এই নম্বরে মেসেজ করলে ঐ ওষুধটি যেখান থেকে তৈরি সেখান থেকে একটি অথেনটিকেশন মেসেজ পাওয়া যাবে।

সহজ কথায়, প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং ক্রেতার সুবিবেচিত পদক্ষেপই পারে নকল ওষুধের দৌরাত্ম্যের লাগাম টেনে ধরতে।

এস এ এইচ ওয়ালিউল্লাহ : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067148208618164