ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারি পরোয়ানা ‘নিখোঁজ’ - Dainikshiksha

ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারি পরোয়ানা ‘নিখোঁজ’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি ‘নিখোঁজ’। সাত দিন আগে আদালত থেকে ফেনীর পুলিশ সুপারের ঠিকানায় পরোয়ানাটি পাঠানো হলেও তিনি তা পাননি বলে জানিয়েছেন।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার বাদী বলছেন, মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারে পুলিশ যত গড়িমসি করবে, তাদের প্রতি মানুষের অনাস্থা ততই বাড়বে। সোমবার (৩ জুন) প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদন আরও জানা যায়, গত ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়। ওই দিনই আদালত মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু সাত দিন পরও সেই পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছায়নি বলে দাবি পুলিশের।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন বলেন, চিঠি পৌঁছাতে এক দিন, বড়জোর দুই দিন লাগতে পারে। এত দিন লাগার কোনো কারণ নেই। পরোয়ানা যেদিন জারি হয়েছে, সেদিনই ফেনীর পুলিশ সুপারের ঠিকানায় সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিঠির স্মারক নম্বর ৬৬৯।

ফেনীর পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও সোনাগাজী থানার ওসি মঈনুদ্দীন আহমেদ জানান, পরোয়ানার চিঠি তাঁদের কাছে পৌঁছায়নি। এমনকি রংপুর রেঞ্জেও পরোয়ানা পৌঁছায়নি। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য। সাময়িক বরখাস্তের পর মোয়াজ্জেম হোসেন রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত আছেন। তবে তাঁর অবস্থান কোথায়, সে সম্পর্কে ফেনী বা রংপুর রেঞ্জ তথ্য দিতে পারেনি।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সূত্র বলেছে, মোয়াজ্জেম হোসেন মামলার কাজে ঢাকায় আছেন। গত ২৯ মে আইনজীবী সালমা সুলতানার মাধ্যমে তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদনও করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও মোয়াজ্জেমকে পাওয়া যায়নি।

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে গেলে মোয়াজ্জেম তাঁর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভিডিওতে দেখা যায়, নুসরাতকে বেশ কিছু আপত্তিকর প্রশ্ন করেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যুর পর ভিডিওটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক এ ঘটনায় বাদী হয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে।

মামলার বাদী সৈয়দ সাইয়েদুল হক বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেনকে পুলিশ সদস্য নয়, আসামি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ যত সময় নেবে, বাহিনীটির প্রতি মানুষের আস্থা তত কমতে থাকবে। তিনি জানান, আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর জামিন আবেদনের সুযোগ নেই। আর জামিন আবেদনের শুনানির সঙ্গে গ্রেপ্তারের কোনো সম্পর্ক নেই।

তদন্ত কমিটির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন
নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ শুরু থেকে আমলে না নেওয়ায় পুলিশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি সোনাগাজীতে ৪৩ জনের সাক্ষ্য নেয়। গত ৩০ এপ্রিল রাতে কমিটি যে প্রতিবেদন জমা দেয়, তাতে বলা হয়, ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এম এনামুল করিম, সহসভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যথাযথভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেননি।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক মাস পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমিটির এখতিয়ার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে। দপ্তরের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায় নিরূপণে তদন্ত হয়েছিল কি না, সেটি পুলিশ করতে পারে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছে। আরও জানতে চাওয়া হয়, কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটির কাজের পরিধি কী ছিল।

চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি স্বরাষ্ট্রসচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। তবে তিনি বলেছেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায় পুলিশ নিরূপণ করতে পারে না। তিনি পদাধিকারবলে মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন। সোনাগাজীতে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে, পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে। এখানে সভাপতির ভূমিকা কী থাকতে পারে? তদন্তে পুলিশ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জড়াতে পারে না। তাঁর প্রশ্ন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে কি পুলিশ তদন্ত করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলেন, মন্ত্রণালয় পুলিশের এই তদন্ত প্রতিবেদনকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারত। এর ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায় ছিল কি না, খতিয়ে দেখতে পারত। আসল কথা বাদ দিয়ে প্রশ্ন তোলাটা ঠিক হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে নুসরাত জাহানের মা অভিযোগ করেছেন। তদন্তে দেখা গেছে, আগেও মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।

ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই চিঠি সম্পর্কে কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে। তবে এখনো সদর দপ্তর চিঠির জবাব দেয়নি।

গত ৬ এপ্রিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পরীক্ষার হল থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এরপর ১০ এপ্রিল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। আলোচিত এ ঘটনার তদন্ত করেছে পিবিআই। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করে গত ২৯ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই।

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003375768661499