কওমি সনদের স্বীকৃতির বিল সংসদে - দৈনিকশিক্ষা

কওমি সনদের স্বীকৃতির বিল সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবিতে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সাত দিনের মধ্যেই এ বিলটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এরপর বিলটি পাসের উদ্যোগ নেয়া হবে।

ফলে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে কওমি ছাত্র শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

‘আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের অধীন কওমি মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস তাকমিলের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবির সমমান প্রদান) বিল ২০১৮’- সংসদে উত্থাপন করেন।

এই বিলটি উত্থাপনের বিষয়ে সংসদকে আগে থেকে সাত দিনের নোটিশ দেয়া হয়নি। এই বিষয়টি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম সংসদে তুলে ধরেন।

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, যদি বিল উত্থাপনের আগে সাত দিনের সময় সীমা মেনে চলা হতো, তাহলে হয়ত সংসদের বর্তমান অধিবেশনে বিলটি পাস করা যেত না। তাই বিশেষ ক্ষমতাবলে বিলটি কার্যতালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

পরে বিলটি উত্থাপনের বিষয়টি ভোটে দেন স্পিকার। আর সংসদ সদস্যরা সেটি উত্থাপনের অনুমতি দিলে স্পিকার সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদেন চেয়ে বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠান।

এর আগে বাংলাদেশে পনের লাখ শিক্ষার্থী কওমি মাদ্রাসায় পড়েন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তবে স্বীকৃত কোনো ডিগ্রি না থাকার ফলে শিক্ষা লাভ করার পরে বাস্তব কাজে তারা নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন না। আমাদের এই মাদ্রাসা সমূহ এবং আলেমদের দাবির প্রেক্ষিতে আইন করার জন্য বিলটি নিয়ে আসা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার নির্দেশে আমরা বিলটি নিয়ে এসেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিলটি আমাদের পাস করা প্রয়োজন।’

গত ১৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। আর সেদিনই বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে বিলটি তোলার কথা জানানো হয়।  এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলেই এই স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি এই মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি। আর এই দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়ার পর ১৯৯৯ সাল বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোট।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ধর্মভিত্তিক এই দলগুলোর আক্বিদাগত ব্যাপক পার্থক্য থাকলেও কেবল এই ইস্যুতে তারা ‘শত্রুর’ সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই স্বীকৃতির বাস্তবায়ন হয়নি।

তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় কওমি আলেমদের গুরু আহমেদ শাহ শফিকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সে সময় নিজেদের মধ্যে বিরোধের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ শক্তির বিরোধিতায় সেটা আর আগায়নি।

তবে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন গণভবনে উপস্থিত ছিলেন আহমেদ শাহ শফিও যিনি হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠনের আমির।

এর দুই দিন পর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে আদেশ জারি করে সরকার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উচ্চপর্যায়ের আলেমদের সঙ্গে দফায় দফায় বসে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে।

আইনে যা আছে

কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি করে এই সমমান দেয়া হলো।’

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই সমমান দেয়ার লক্ষ্যে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়া- বেফাক সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে আল্লামা আহমেদ শাহ শফীর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি সনদবিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিবেচিত হবে। এদের তত্ত্বাবধানে নিবন্ধিত মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বিবেচিত হবে।

এই কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে। পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল এবং সনদ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক উপ-কমিটি গঠন করতে পারবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়গুলো অবহিত করবে কমিটি। এই কমিটি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে।


হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়

কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্তে হয়নি। ২০০৯ সাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী আলেমদের সঙ্গে যে আলোচনার সূত্রপাত করেন, সেটি ২০১০ সালে গ্রহণ করা শিক্ষানীতিতেও স্থান পায়।

সে সময়ই কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৩ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে আল্লামা শফীর নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে সরকার। ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে সদস্য সচিব ছিলেন গওহারডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন।

কওমি মাদরাসা মূলত ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ মাদরাসার আলোকে প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থা। এখানে কোরআন-হাদিসের মূলধারার শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদ্রাসা রয়েছে।

এতদিন স্বীকৃতি না থাকায় কওমি মাদ্রাসার সদনধারীরা সরকারি, বেসরকারি কোনো চাকরিতে যোগ্য বলে বিবেচিত হতেন না। এখন তারা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন।

অবশ্য এ বিষয়ে নতুন আইন পাস হওয়ার আগেই গত মার্চে ১০১০ জন কওমি আলেমকে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (ষষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর। কওমি শিক্ষায় ছয়টি স্তর রয়েছে। এগুলো হলো: ইবতেদাইয়্যাহ (প্রাথমিক), মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্নমাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ আম্মাহ (মাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ খাসসাহ (উচ্চ মাধ্যমিক), মারহালাতুল ফজিলত (স্নাতক), মারহালাতুত তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান)।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078721046447754