নারায়ণগঞ্জ বন্দরে হাজি আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল গণিকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। নিজের মেয়ের পরীক্ষার নিবন্ধন নিয়ে বাগ-বিতণ্ডার একপর্যায়ে আবদুল গণির দিকে তেড়ে যান হারুন অর রশীদ। একপর্যায়ে তাঁকে চপেটাঘাত করাসহ নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন তিনি। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের এমন আচরণে স্কুলে থাকা সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। বিষয়টি দ্রুত জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা সেখানে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে।
রোববার (০৫ মে) সকালে ওই ঘটনার পরপর তড়িঘড়ি করে ছুটি ঘোষণা করা হয় স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগেও একইভাবে প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হন হারুন অর রশীদ। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল ১১টায় হারুন অর রশীদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণির কক্ষে যান। ওই সময় তিনি তার মেয়ের এসএসসির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। অভিভাবক সদস্যের উচ্চবাচ্যে ছুটে যান পাশের শিক্ষক সভাকক্ষ ও আশপাশে থাকা অনেকেই।
একপর্যায়ে হারুন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের দিকে তেড়ে যান এবং তাঁকে চপেটাঘাত করেন। তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকরা প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণির মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে হারুন তাঁর গায়ে হাত তোলার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে কমিটির সবাই বসেছি, দেখি কী সমাধান হয়।
এদিকে, স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বৈঠকে বসেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মইনুল হাসান বাপ্পি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণি।
সাংবাদিকরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইলেও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে যান। ওই সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণিকে চরম ভীত অবস্থায় দেখা গেছে। তিনি তখন লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান। তিনি বলেন, হারুন অর রশীদ আগে থেকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে তার মেয়ের এসএসসির রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে কথা বলতে এসে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার তুলে আমাকে মারতে উদ্যত হলে তার ছোট ভাই তাকে নিবৃত্ত করেন।
হারুন প্রধান শিক্ষকের টেবিল চাপড়িয়ে উচ্চবাচ্য করেছেন বলেও জানান প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মইনুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে আমি স্কুলে এসেছি এবং বিষয়টি হাতাহাতির ঘটনা ছিল না বলে উভয় পক্ষ জানিয়েছে।
প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে হারুন অর রশীদ বলেন, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল এবং তার পরিসমাপ্তিও ঘটেছে।
বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরাও শুনেছি, কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।